চেনা মন্দিরের অজানা ইতিহাস, গোরস্থান থেকে যেভাবে গড়ে উঠেছিল দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির

959

আগামী ২৪ তারিখ কালীপুজো। অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য মা আবারও কালী রুপে পা রাখতে চলেছেন মর্ত্যলোকে। পৌরানিক কথা অনুযায়ী, মহিষাসুরকে নিধনের পর বেঁচে ছিলেন রক্তবীজ নামে এক অসুর। এই অবস্থায় দুর্গার ভীষণ ক্রোধে তাঁর দুই ভ্রূ-এর মাঝখান থেকে জন্ম নেন কালী ।নগ্নিকা কালীর ভয়াল দৃষ্টিতেই নিহত হন বহু অসুর । এরপর দেবীর চিৎকারে প্রাণহানি হয় আরও অনেক অসুরের। তারপরেও টিকে থাকেন রক্তবীজ । কারন ব্রহ্মার প্রাপ্ত বর অনুযায়ী রক্তবীজ তাঁর একফোঁটা রক্ত থেকে জন্ম দিচ্ছিল আরও হাজার রক্তবীজ অর্থাৎ তাঁর (রক্তবীজ) একফোঁটা রক্ত ভূমিতে পড়লেই আবির্ভূত হচ্ছিল বাদবাকি অসুরেরা। এই অবস্থায় দেবী কালী তাঁকে অস্ত্রে বিদ্ধ করে তাঁর সব রক্ত পান করতে থাকেন। আকণ্ঠ রক্ত পান করে বিজয়নৃত্য শুরু করেন কালী । নিহত অসুরদের হাত দিয়ে তিনি কোমরবন্ধনী এবং মাথা দিয়ে মালিকা বানিয়ে পরিধান করেন। এবং এই পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বন করেই যুগ যুগ ধরে পূজিত হয়ে আসছেন মা । এরপর বহু যুগ অতিক্রমের পর ১৮৪৭ সালের একটি রাতে রানি রাসমণি দেবী কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে ১৮৫৫ দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দির প্রতিষ্ঠাকালে রামকৃষ্ণ পরমহংসের দাদা রামকুমার চট্টোপাধ্যায় রানিকে প্রভূত সাহায্য করেছিলেন। রামকুমারই ছিলেন মন্দিরের প্রথম প্রধান পুরোহিত।১৮৫৭-৫৮ সালে কিশোর রামকৃষ্ণ পরমহংস এই মন্দিরের পূজার ভার গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি এই মন্দিরকেই তার সাধনক্ষেত্ররূপে বেছে নেন।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়,মন্দিরের ২০ একরের প্লটটি জন হেস্টি নামে এক ইংরেজের কাছ থেকে কেনা হয়। লোকমুখে জায়গাটি পরিচিত ছিল সাহেবান বাগিচা নামে এছাড়াও এর একটি অংশ ছিল গোরস্থানের অংশ। তাই তন্ত্রমতে স্থানটি শক্তি উপাসনার জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। আটবছরে নয় লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই মন্দির নির্মিত হয়। ১৮৫৫ সালের ৩১ মে স্নানযাত্রার দিন মহাসমারোহে মন্দিরে মূর্তিপ্রতিষ্ঠা করা হয়। পূর্বে মন্দিরের আরাধ্যাকে মাতা ভবতারিনি কালিকা নামে অভিহিত করা হয়েছিল। রামকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রধান পুরোহিত পদে বৃত হন, তার ছোটোভাই গদাধর বা গদাই (পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণ পরমহংস) তার সহযোগী হন। পরে তার ভাগনে হৃদয়ও তাকে সহায়তা করতে থাকেন। মূলত, ১৮৮৬ পর্যন্ত প্রায় তিরিশ বছর শ্রীরামকৃষ্ণ এই মন্দিরে অবস্থান করেন। তার অবস্থানের কারণে পরবর্তীকালে এই মন্দির পরিণত হয় একটি তীর্থক্ষেত্রে। মন্দিরটি বঙ্গীয় স্থাপত্যশৈলীর নবরত্ন স্থাপত্যধারায় নির্মিত। মূল মন্দিরটি তিন তলা। উপরের দুটি তলে এর নয়টি চূড়া বণ্টিত হয়েছে। মন্দির দক্ষিণমুখী। একটি উত্তোলিত দালানের উপর গর্ভগৃহটি স্থাপিত। এই দালানটি ৪৬ বর্গফুট প্রসারিত ও ১০০ ফুট উঁচু। গর্ভগৃহে শিবের বক্ষোপরে ভবতারিণী নামে পরিচিত কালীমূর্তিটি প্রতিষ্ঠিত। এই মূর্তিদ্বয় একটি রুপোর সহস্রদল পদ্মের উপর স্থাপিত। মূল মন্দিরের কাছে যে বারোটি একই প্রকার দেখতে পূর্বমুখী শিবমন্দির রয়েছে সেগুলি আটচালা স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত। গঙ্গার একটি ঘাটে দুই ধারে এই মন্দিরগুলি দণ্ডায়মান।