মা কালীর সম্পর্কে এই কয়েকটি অজানা তথ্য জেনে নিলে ভক্তি-শ্রদ্ধায় ভরে যাবে আপনার মন

1864

মা কালী নাম শুনলেই যেন মন ভক্তি শ্রদ্ধায় ভরে যায়। তবে এই দেবী অনেকের কাছে কৌতুকেরও। সেক্ষেত্রে এই দেবীরূপের প্রকৃত তাৎপর্য জানা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কি সেই অর্থ? চলুন আজ তা সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক—

১. মা কালীর মাথায় কালো চুলের ঢল। তাঁর এই মুক্ত কেশপাশ তাঁর বৈরাগ্যের প্রতীক। তিনি জ্ঞানের দ্বারা লৌকিক মায়ার বন্ধন ছেদন করেছেন। তাই তিনি চিরবৈরাগ্যময়ী।

২. মা কালীর গায়ের রং কালো। আসলে তিনি যে কোনও বর্ণের অতীত। আর কালো রং সকল বর্ণের অনুপস্থিতির প্রতীক। কখনও দেবীকে গাঢ় নীল বর্ণেও কল্পনা করা হয়। তিনি গাঢ় নীল আকাশের মতোই অসীম। তাঁর নীল গাত্রবর্ণ সেই গগনসম অসীমতার ইঙ্গিতবাহী।

৩. মা কালী নগ্নিকা। তিনি বিশ্বব্যাপী শক্তির প্রতীক। তিনি অসীম। এই চিরশক্তিকে আবৃত করে এমন সাধ্য কোন বস্ত্রের রয়েছে! দেবী তাই দিগম্বরী। ।

৪. মা কালী সাদা দাঁতের দ্বারা নিজের রক্তবর্ণ জ্বিহাকে কামড়ে ধরে রয়েছেন। লাল রং রজোগুণের ও সাদা রং সত্ত্বগুণের প্রতীক। দাঁতের দ্বারা জিহ্বাকে চেপে ধরে দেবী তাঁর ভক্তকুলকে বোঝাতে চাইছেন, ত্যাগের দ্বারা ভোগকে দমন করো।

৫. মা কালী মুণ্ডমালিনী। দেবীর গলায় রয়েছে মোট ৫০টি মুণ্ডের মালা। এই মুণ্ডগুলি ৫০টি বর্ণ (১৪টি স্বরবর্ণ ও ৩৬টি ব্যঞ্জনবর্ণ) বা বীজমন্ত্রের প্রতীক। এই বীজমন্ত্রই সৃষ্টির উৎস। দেবী নিজে শব্দব্রহ্মরূপিনী।

৬. মা কালী চতুর্ভুজা। তাঁর ডানদিকের উপরের হাতে রয়েছে বরাভয় মুদ্রা, নীচের হাতে আশীর্বাদ মুদ্রা। কারণ দেবী তাঁর সন্তানদের যেমন রক্ষা করেন, তেমনই ভক্তের মনোবাঞ্ছাও পূর্ণ করেন। বাঁ দিকের উপরের হাতে তিনি ধরে রয়েছেন তরবারি, আর নীচের হাতে একটি কর্তিত মুণ্ড। অর্থাৎ জ্ঞান অসির আঘাতে তিনি যেমন জীবকুলকে মায়াবন্ধন থেকে মুক্তির পথপ্রদর্শন করতে পারেন, তেমনই মায়াচ্ছন্ন জীবের মস্তিস্কে প্রদান করতে পারেন প্রজ্ঞা কিংবা বিশেষ জ্ঞান।

৭. দেমা কালীর কোমরে কর্তিত হাতের মেখলা পরিহিতা। এই হাত কর্মের প্রতীক। মানুষের সমস্ত কর্মের ফলদাত্রী দেবী। জীবনচক্রের শেষে সমস্ত আত্মা স্বয়ং দেবীর অঙ্গীভূত হয়। এবং পরে মাতৃজঠর থেকেই পুনরায় তাদের কর্মফল অনুসারে জন্মলাভ করে।

৮. মা কালীর পদতলে শিব শায়িত। শিব স্থিতি, দেবী গতি। শিব ব্রহ্মচৈতন্য, দেবী ব্রহ্মশক্তি। তাঁদের সম্মিলন ব্যতীত সৃষ্টির উৎপত্তি সম্ভব নয়। বঙ্গে সাধারণত দক্ষিণা কালীর পুজো হয়ে থাকে। এই মূর্তিতে দেবীর দক্ষিণ পদ বা ডান পা শিবের বুকে স্থাপিত থাকে।

৯. মা কালী ত্রিনয়ন সম্পন্না। এই ত্রিনয়ন চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নির ন্যায় অন্ধকার বিনাশকারী। এই ত্রিনয়নের মাধ্যমে দেবী যেমন অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দর্শন করে থাকেন, তেমনই প্রত্যক্ষ করেন সত্য, শিব ও সুন্দরকে; অর্থাৎ বৃহত্তর অর্থে সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়কে।