১৯৩৭ এমিলিকে বিয়ে, ১৯৪২ কন্যাসন্তান অনিতার জন্ম? জেনে নিন নেতাজির বিবাহিত জীবনের গল্প

737

ঘটনাটি আজ থেকে প্রায় ৮৬ বছর আগের। অর্থাৎ ১৯৩৪ সালে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু তখন অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় থাকতে শুরু করেছেন। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে তখন দিন কাটছিল তাঁর। এদিকে তাঁর নির্বাসনও চলছে । শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও ঠিক সেই সময় তিনি তাঁর প্রম বই “ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল” লেখা শুরু করেন। এবং বইটি লেখার সময় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বইটির লেখা টাইপ করার জন্য তিনি একজন সেক্রেটারি খুঁজছিলেন। ড. রমণী মাথুরের মাধ্যমে তিনি পরিচিত হন এমিলি শেঙ্কলের সাথে। কথা বার্তা বলার পর এমিলিকে তার সেক্রেটারির কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়। এমিলি শেঙ্কলের পরিবার ছিল তখনকার দিনে বেশ রক্ষণশীল অস্ট্রীয় পরিবার । পরিবারের পক্ষ থেকে এমিলিকে চার্চের নান হবার জন্য পরিবার থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে । কিন্তু এমিলি পারিবারিক চাপ উপেক্ষা করে সেক্রেটারিয়াল পড়াশোনা করেন। যদিও একজন ভারতীয়র সেক্রেটারির কাজ করার ব্যাপারে এমিলির পিতার আপত্তি ছিল। কিন্তু মা- এবং বোনকে রাজি করিয়ে এমিলি কাজটি নেন। এমিলি শেঙ্কল যখন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর সামনে এসেছিলেন ইন্টারভিউ দিতে তখন তাঁর বয়স ছিল ২৩ বছর । আর নেতাজীর তখন ৩৭ চলছে । এরপর নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর সাথে কাজ করার সময় দুজনের মাঝে ধীরে ধীরে হৃদ্যতা তৈরি হয়। ১৯৩৭ সালে তারা বিয়ে করেন। নেতাজির বিবাহিত জীবন ছিল মাত্র ৯ বছর । কিন্তু দেশের জন্য নিবেদিত প্রান নেতাজি তাঁর দাম্পত্য জীবনও উৎসর্গ করেছিলেন দেশের সেবায় । ফলে ৯ বছরের বিবাহিত জীবনের মধ্যে মাত্র ৩ বছর তাঁরা একসাথে ছিলেন । যদিও এই বিবাহের কোন অফিসিয়াল প্রমাণ নেই।

তথ্য বলছে, ১৯৩৪ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত সময়টিতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এমিলিকে ১৬০টির মত চিঠি লেখেন। বেশিরভাগ চিঠিতেই বিভিন্ন কাজের দিক নির্দেশনা দিয়ে লেখা । তবে এমিলিকে লেখা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর সেই সব চিঠিতে প্রায়ই ফুটে উঠেছে এমিলির প্রতি গভীর অনুরাগ, স্নেহ এবং মাঝে মধ্যে কিঞ্চিত ঈর্ষাকাতরতা । একবার নেতাজি এমিলিকে দিয়ে ভারতীয় পত্রিকা দ্যা হিন্দুতে আর্টিকেল লিখিয়েছিলেন । তবে লেখাগুলো নিজে এডিট করে দিয়েছেন এবং এমিলির বোঝার জন্য তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বলকান অঞ্চলের ভু-রাজনৈতিক বিষয়ে চমৎকার বিশ্লেষণ লিখেছেন। তবে দেখা যায়, ঈর্ষা মিশ্রিত কেয়ারিং ফুটে উঠে ৩/৫/১৯৩৬ এর চিঠিতে। যেখানে সুভাষ বসু বলছেন, ” ভারতীয়দের পাঠদান করার সিদ্ধান্তটি কেয়ারফুলি ভেবে নিও, কারণ সাধারণত ওরা এমন কাউকে চায় যে ফ্লার্ট করবে এমনকি নাচও শেখাবে। এমন কিছু মহিলা আছে এবং আমি আতংকিত যে ওরা তোমাকেও না অমন একজন ভেবে বসে! ড. সেন তোমার সাথে কেমন আচরণ করছে?” আবার দেখা গেছে যে সুভাষ বসু এমিলিকে বকাবকিও করছে কারণ এমিলি তাকে সুটকেস কিনে তাতে শীতের জামা কাপড় ভরে পোস্টে পার্সেল করে দিয়েছে। এরপর ২৯শে মে ১৯৪২ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু হিটলারের সাথে দেখা করে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে জার্মানির সাহায্য চায়। ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রাখতে চায়। কিন্তু তাদের সাক্ষাতে উল্লেখযোগ্য কোন ফলাফল হয় না। সুভাষ চন্দ্র বসু দিন দিন নাৎসিদের উপর ভরসা হারাচ্ছিলেন এবং জাপানের সাথে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে যুক্ত হতে আগ্রহী হচ্ছিলেন। ২৯শে নভেম্বর ১৯৪২ সালে তাদের ঘরে আসে তাদের একমাত্র কন্যাসন্তান অনিতা এবং ৮ই ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ সালে সুভাষ বসু জার্মান সাবমেরিনে করে জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। সেটাই ছিল নেতাজির সাথে তাঁর স্ত্রী ও কন্যার শেষ বিদায়।