মৃত্যুর পর কেউ স্বর্গ লাভ করে, তো কেউ নরক লাভ করে! জানুন, এই ‘স্বর্গ ও নরক লাভ’ আসলে কি?

হিন্দু ধর্মমতে, একজন মানুষ যখন মৃত্যু বরণ করেন তখন তাকে শ্মশানে নেওয়া হয়। শ্মশানে নেওয়ার থেকে শুরু করে মৃত ব্যক্তির সৎকার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কিছুক্ষণ পরপর একটা ধ্বনি শোনা যায়-অমুক ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করেছে, স্বর্গ পেয়েছে । তবে আসলে কি ঐ মৃত ব্যক্তি আদৌ স্বর্গ লাভ করতে পেরেছে সেটার কি কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারে? আমরা দেখি ভালো মানুষ মৃত্যু বরণ করলেও একই ধ্বনি আর খারাপ মানুষ মৃত্যু বরণ করলেও একই ধ্বনি উচ্চারণ করে। শ্মশানে উপস্থিত সঙ্গী সাথীগণ। সবাই মনে করে একজন ব্যক্তি মারা গেলে তিনি স্বর্গ লাভ করে, আসলে কি স্বর্গ লাভ করা এতই সহজ? এই ধারনাটা একটা কথার কথা।

এবার আমরা জেনে নিই স্বর্গ কাকে বলে?

স্বর্গ হচ্ছে চিরসুখের স্থান যেখানে ভোগ আর ভোগ। একজন মৃত ব্যক্তি পৃথিবীতে জীবিত থাকা অবস্থায় পরমেশ্বর ভগবানের কাছে ধ্যান ধারণা, সাধনা, কিংবা তপস্যা করেছেন, পরজন্মে যেন বর্তমান জন্মে না পাওয়া অনেক বিষয় সহ মনের মত যেন কিছু পাই।

এই জগতে সবকিছুই পরিচালিত হয় প্রতিটি জীবের গুণ এবং কর্মের মাধ্যমে,কিন্ত কিছু জীব আছে যারা নিজেদের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিমান বলে মনে করে। অশিক্ষিত জীব নিজের অহংকারে অন্ধ হয়ে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়। আর সে মনে করে তারজন্য কোন ধর্ম নেই, ধর্মের কোন আইন নেই। সে আরো মনে করে এই পৃথীবিতে কোন ঈশ্বর নেই। সে জন্য তার ভিতর কোন ভয় নেই, সে তার ইচ্ছেমত সবার উপর নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে।

এরকম ভাবে সে নিজের অহংকারে মধ্য দিয়ে বিভিন্ন পাপকর্মে সংযুক্ত হয়। তার ফলে তাকে এই প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে জন্ম-জন্মান্তরে বিভিন্ন নরকের শাস্তীভোগ করতে হয়। তার এ কঠোর যন্ত্রণা ভোগের একমাত্র কারণ হল তার অহংকার আর মূর্খতা। সে এই জড়াপ্রকৃতির নিয়ম কানুনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল না। প্রত্যেককে তিনিটি গুণের অধীনে বিভিন্ন প্রকার কর্ম করতে হয়। প্রত্যেককে তার কর্ম অনুযায়ি এজীবনে অথবা পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন প্রকার ফল ভোগ করতে হয়। ধার্মিকেরা সবসময় অধর্মীদের থেকে ভিন্নভাবে আচরণ করে, তাই অধর্মীরা ভিন্নভাবে কর্মফল ভোগ করে।

গুণ ও কর্ম অনুসারে স্বর্গ ও নরকঃ

সত্ত্বগুণঃ এর অর্থ হল যারা প্রত্যেকটি কর্ম লোভ, লালসা, হিংসা, কাম, ক্রোধ, ফল লাভের আকাঙ্কা ইত্যাদি বর্জন করে কর্ম করে তারা সবসময় ধার্মিক এবং সুখী হয়, আর সে জন্য তারা পরবর্তীতে জন্মগ্রহণ করেনা। তাদের স্বর্গ লাভ হয়।

রজোগুণঃ এর অর্থ হল যারা প্রত্যেকটি কর্ম লোভ, লালসা, হিংসা, কাম, ক্রোধ, ফল লাভের আকাঙ্কা নিয়ে করে, কিন্ত ধার্মিক মনোভাব থাকে, তারা সুখ ও দুঃখ দুই-ই ভোগ করে, আর সে জন্য তারা পরবর্তীতে পূনরায় জন্মগ্রহণ করে এবং কর্ম ফল ভোগ করে।

তমোগুণঃ এর অর্থ হল যারা প্রত্যেকটি কর্ম লোভ, লালসা, হিংসা, কাম, ক্রোধ, পরস্ত্রী গ্রহণ, সম্পদ লুন্টন, ফল লাভের আকাঙ্কা দ্বারা প্রভাবিত এবং অধর্মের পথে সঞ্চালন হয় তারা সর্বদাই দুঃখী এবং তারা পশুর মতো জীবনযাপন করে। তাদের কখনো উন্নতি হয়না। তারা এই তমোগুণের মাধ্যমে বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন প্রকার ফল ভোগ করে।

আমাদের এই জড়াপ্রকৃতিতে পূর্ণকর্মের ফলে যেমন স্বর্গ লাভ হয়, তেমনি পাপকর্মের ফলে নরক লাভ হয়। আর এই তমোগুণের প্রভাবে মানুষ যখন পাপকর্মে সঞ্চালন হয় তখন তাদের জ্ঞান নষ্ট হয়। এই অজ্ঞানতার কারনে যে কর্ম করা হয় ঠিক সে অনুসারে তাদের জীবনে বিভিন্ন নরকের স্তর প্রাপ্ত হয়। আবার যারা অজ্ঞানবশত ভালো আচরণ করে, তাহলে তাদের শাস্তী কিছু কম হয়। আবার যারা জ্ঞানবশত পাপকর্ম করে, তাহলে তাদের আরো বেশি শাস্তী যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। আবার যারা নাস্তিকতাবশত পাপকর্ম করে, তাদেরকে জন্ম – জন্মান্তর নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।