পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি…হাসে অন্তর্যামী, জানেন কথাটির আসল অর্থ কি?

রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম,
ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব—হাসে অন্তর্যামী।’

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এই পঙক্তিগুলোর সাথে কে না পরিচিত? বিশ্বকবি যে রথযাত্রার কথা কবিতায় লিখেছেন, সে রথযাত্রার রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। সে ইতিহাসে আছে কল্পকাহিনী আর পুরাণের মিশেল, আছে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর আচার-প্রথার বর্ণনা। সেসব ইতিহাস আর প্রথাসিদ্ধ ঘটনার বর্ণনা নিয়ে এই আয়োজন।

রথ শব্দের আভিধানিক অর্থ অক্ষ, যুদ্ধযান বা কোনোপ্রকার যানবাহন অথবা চাকাযুক্ত ঘোড়ায় টানা হালকা যাত্রীবাহী গাড়ি। এই গাড়িতে দুটি বা চারটি চাকা থাকতে পারে। সাধারণত অভিজাত শ্রেণীর ঘোড়ার গাড়িকে রথ বলা হয়। পৌরাণিক কাহিনীতে রথের ব্যবহার দেখা যায় যুদ্ধক্ষেত্রে। মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সেনানায়করা রথে চড়ে নিজেরা যুদ্ধ করেছেন এবং সেনাবাহিনীকে পরিচালনা করেছেন। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে রথ শব্দের অর্থ কিন্তু ভিন্ন। গুরুত্ব এবং শ্রদ্ধার দিক থেকেও বেশ উপরে। তাদের কাছে রথ একটি কাঠের তৈরি যান, যাতে চড়ে স্বয়ং ভগবান এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন। ভগবানের এই রথারোহণই ‘রথ যাত্রা’ নামে পরিচিত। এই পবিত্র উৎসবটি প্রত্যেক বছর নির্দিষ্ট সময়ে উদযাপিত হয়ে থাকে।

রথের নানা কাহিনী প্রচলিত রয়েছে, যেগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের নাম। প্রথমেই জানিয়ে রাখি জগন্নাথ এবং বিষ্ণু, শ্রী কৃষ্ণেরই দুই রূপ। বলরাম বা বলভদ্র, শ্রী কৃষ্ণ বা জগন্নাথ এবং সুভদ্রাদেবী এই তিনজন একে অপরের ভাইবোন। পুরাণে এমনটা বর্ণিত যে, তাদের তিন ভাইবোনের ঘনিষ্ঠ এবং স্নেহপরায়ণ সম্পর্কের জন্যই তাঁরা পূজনীয়। রথযাত্রাও তাদেরকে কেন্দ্র করেই।