ফালাকাটা শৌলমারী আশ্রমের সেই সাধুই কি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু?

1185

দেশবাসীর বিশ্বাস নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাননি। তিনি ষাটের দশকেও জীবিত ছিলেন। উত্তরবঙ্গের ফালাকাটার এক আশ্রমে তিনি কি ভিন্ন পরিচয়ে আত্মগোপন করেছিলেন? অপ্রকাশিত সরকারি ফাইলে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছিল। ২০১৬ সালের ২৭ মে প্রকাশিত গোপন ফাইলে যে তথ্য জানা যায় তা হল, সেই সময় প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা শৌলমারী আশ্রমের ওই ব্যক্তিকে নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করতেন। প্রকাশিত অন্য একটি ফাইলের নথি বলছে, ভান্ডারির পরিচয়ে নেতাজি বিষয়ক যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত হয়েছিল অধুনা বিলুপ্ত একটি ফাইলে। বলা বাহুল্য, সরকারি সংরক্ষণাগার থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই ফাইলের কোনও চিহ্ন অবশিষ্ট নেই।

মূলত, বিতর্কের সূত্রপাত ১৯৬৩ সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে পাঠানো শৌলমারী আশ্রমের সম্পাদক রমণীরঞ্জন দাসের লেখা একটি চিঠি। ওই চিঠিতে নেতাজি বিষয়ক বেশ কিছু তথ্য ছিল বলে জানা গিয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর ১৯৬৩ সালের ২৩ মে তারিখে বিষয়টি উদ্ধৃত করে ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর ডিরেক্টর বি এন মল্লিককে একটি অত্যন্ত গোপনীয় মেমো পাঠান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য আপ্তসহায়ক কে রাম। ওই বছরের ১২ জুন আরেকটি চূড়ান্ত গোপনীয় নোটে [নম্বর III(51)/63(6)] কে কে ভান্ডারি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে জবাব দেন মল্লিক। এরপর ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর এই বিষয়ে চূড়ান্ত গোপনীয় উদ্ধৃতি দেয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। ফের ১১ নভেম্বর বিষয়টি সম্পর্কে তদন্তের জন্য তদ্বির করে পিএমও। ১৬ নভেম্বর গোপনে রিপোর্ট পেশ করে আইবি। শৌলমারীর সাধুই কি তবে নেতাজি? নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের তদন্তে নিয়োজিত মুখোপাধ্যায় কমিশন কিন্তু জানিয়েছিল, সন্দেহ অমূলক। তবে বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। ৩৭ বছর পর ২০০০ সালে পিএমও-র আলোচনায় বিষয়টি ফের উঠে আসে।

১৯৯৯ সালে গঠিত বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে থাকা কমিশন নেতাজি সম্পর্কীয় যাবতীয় গোপন নথি হস্তান্তরের জন্য পিএমও-কে চাপ দিতে শুরু করে। উপায় না দেখে চূড়ান্ত গোপনীয় ফাইলগুলি সাধারণ গোপনীয় ফাইলের আঁওতাভুক্ত করে কমিশনকে দেওয়া যায় কিনা, তাই নিয়ে লাগাতার আলোচনা চলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। ২০০০ সালের ৫ জুলাই একটি নোটে আন্ডার সেক্রেটারি জানান, ‘আন্ডার সেক্রেটারির (পলিটিক্যাল) এবং ডিরেক্টরের (এ) সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে, এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, গোপনীয়তার মাত্রা হ্রাস করে ১২/৬/১৯৬৩ ও ১৬/১১/১৯৬৩ তারিখে আইবি ডিরেক্টরের উদ্দেশে লেখা কে কে ভান্ডারি (যাঁকে সুভাষচন্দ্র বসুর ছদ্ম পরিচয় বলে বিশ্বাস করা হয়) সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য আপ্তসহায়ক কে রামের লেখা ২টি চিঠির গোপনীয়তার মাত্রা হ্রাসের ব্যাপারে আইবি-কে অনুরোধ জানানো যেতে পারে।’ প্রসঙ্গত, ষাটের দশকে শৌলমারী আশ্রমের সাধুর সঙ্গে নেতাজির শারীরিক সাদৃশ্য নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। তবে সেই সন্দেহ বরাবরই ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে এসেছে মুখোপাধ্যায় কমিশন।