প্রভু আপনি কি সত্যিই কি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন? জানুন শ্রীকৃষ্ণের উত্তর

মহাভারতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর, একদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর প্রিয় উদ্ভবকে ডেকে বলেন, আমার এ অবতারে কত মানুষকে আমি সাহায্য করেছি, বর দিয়েছি। কিন্তু তুমি আমার কাছে কখনো কিছু চাও না। তুমি এখনই আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করো; তোমাকেও কিছু কৃপা করার আনন্দ লাভের মাধ্যমে এ অবতারে আমার লীলা সমাপ্ত করতে চাই।” এরপরেই উদ্ভব মহাভারতের কথা জানতে চান, তখন শ্রী কৃষ্ণ মুচকি হেসে তাঁর প্রিয় উদ্ধবকে বলেন, এ পৃথিবীর নিয়ম হলো শুধু তারাই জেতে যাদের বিবেক (ভালো-মন্দ পার্থক্যের বিচারবোধ) আছে। যেমন পাশাখেলায় যুধিষ্ঠিরের বিবেক কাজ করেনি যখন দুর্যোধনের বিবেক কাজ করেছিল, তাই দুর্যোধনের জয় হয়েছিল।” শ্রীকৃষ্ণের কথায় উদ্ধব আরো দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলতে লাগলেন, “দুর্যোধনের অনেক সম্পদ ছিল, কিন্তু সে পাশা খেলতে জানতো না, তাই সে মামা শকুনিকে তার জায়গায় খেলতে বলেছিল। এটা বিবেক। ঠিক একইভাবে যুধিষ্ঠির মহারাজও আমাকে তার হয়ে খেলতে বলতে পারতো, যেহেতু আমিও সম্পর্কে তার পিসতুত ভাই। কে জিততো, খেলাটা যদি আমার আর শকুনি মামার মধ্যে হতো? তোমার কী মনে হয় উদ্ধব? আমি কী করে যুধিষ্ঠিরকে ক্ষমা করি, যখন সে আমাকেই ভুলে গিয়েছিল?”“বিবেকবর্জিত অবস্থায় সে আরো একটা বড় ভুল করে বসল; সে প্রার্থনা করল, আমি যেন পাশার ওই সভাতে না যাই, আর তার এ প্রতারণার শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে পাশা খেলার পরিণতির কথা না জানি। সে প্রার্থনা দিয়ে পাশার ওই সভার বাইরে আমাকে বেঁধে ফেলল, আমি তো বাইরে অপেক্ষা করছিলাম, আর প্রত্যাশা করছিলাম কেউ অন্তত আমাকে ভেতরে আসার প্রার্থনা করুক।

তখন উদ্ধব বললেন, “অসাধারণ ব্যাখ্যা প্রভু, আমি সন্তুষ্ট। আমি কি আপনাকে আরেকটা প্রশ্ন করতে পারি?” শ্রীকৃষ্ণ অনুমতি দিলে উদ্ধব জিজ্ঞেস করলেন, “প্রভু, তাহলে আপনি কি শুধু ডাকলেই আপনার ভক্তের সাহায্যে আসেন, নিজে থেকে ধর্ম রক্ষার জন্য আসেন না?”

শ্রীকৃষ্ণ বললেন, “উদ্ধব, পৃথিবীতে সবার জীবন চালিত তাদের কর্মফলের ওপর। আমি এতে কোনো হস্তক্ষেপ করি না, আমি তোমার অত্যন্ত কাছ থেকে সবকিছুর সাক্ষী হই মাত্র। এটাই ঈশ্বরের ধর্ম।” উদ্ধব বললেন, “ও, তাহলে আপনি আমাদের খুব কাছে থেকে আমাদের পাপকর্ম করতে দেখতে থাকবেন; আমারা যখন পাপের পর পাপ করতে থাকব, আপনি তখনো দেখতে থাকবেন। আপনি কি চান আমরা একের পর এক পাপ করতেই থাকি, ভুল করতে থাকি, আর তার ফলে শাস্তি পেতে থাকি?”

শ্রীকৃষ্ণ বললেন, “উদ্ধব, তোমার প্রশ্নের গভীরতা অনুধাবন করো। তুমি যখন বুঝতে পারছ আমি তোমার খুব কাছে তোমার সব কর্মের সাক্ষী হই, কী করে তুমি খারাপ বা অনৈতিক কাজ করো? তুমি ভবো, আমার অজ্ঞাতেই তুমি অনেক কিছু করতে পারো, আর ঠিক তখনি তুমি বিপদে পড়। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের অজ্ঞতা ছিল এই যে, তিনি ভেবেছিলেন তিনি আমার অজ্ঞাতে পাশা খেলবেন। যদি তিনি সত্যি এটা অনুধাবন করতেন যে, আমি সবসময় সবার সঙ্গে তাদের কর্মের সাক্ষী থাকি, তাহলে কি পাশার ওই সভা ভিন্নভাবে শেষ হতো না?” উদ্ধব বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন, ভক্তিতে আপ্লুত হলেন। তিনি বললেন, “কী সুগভীর দর্শন! কী ‍সুমহান সত্য!

বলা বাহুল্য, শৈশব থেকেই উদ্ভব শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে থাকতেন উদ্ধব। তাঁর রথ চালানো থেকে শুরু করে শ্রী কৃষ্ণের অনেক সেবা করতেন। কিন্তু তিনি কখনোই ভগবানের কাছ থেকে কোনো সাহায্য বা বর প্রার্থনা করেননি।