বড়দিনে আমাদের কাছে ‘বাবা’- ই হল আসল সান্তা

সান্তাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে নেই। সে আছে আমাদের সঙ্গেই

172

স্বপন দাস,মুখ্য সম্পাদকঃ  সান্তা ,তাঁর বাড়ি থেকে সেই কবে যাত্রা শুরু করেছে। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা। সে এসে পৌঁছবে আমার একেবারে বিছানার কাছে।ঠিক মাথার দিকে। বালিশের নিচে রাখা মোজাটায় ভরে দেবে উপহার। আমি মনে মনে যেতা ভেবেছিলাম। ঠিক সেটাই। মাঝে মাঝে ভাবি সান্তা কি করে জানতে পারে আমার মনের কথা ? কেমন করে জেনে যায় সব ? আর কি করেই বা সে আমার মনের জিনিষটা পৌঁছে দেয় আমার কাছে ? বেশ কয়েক বছর ভেবে ছিলাম কথাটা। বেশ কয়েক বছর চুপ্টি করে ,চোখ বন্ধ করে ,ঘুমের ভান করে বালিশে মাথা দিয়ে শুয়েও ছিলাম। কিন্তু সান্তা কখন যে এসে , আমার মাথার কাছে উপহারটা দিয়ে গিয়েছিল , বুঝতেই পারিনি। হয়ত সে তাঁর , ঘুমের দেশের পরীদের নিয়ে এসেছিল বল্গা হরিণের ওই স্লেজ গাড়িটা করে। সেই কুমেরু থেকে। ঘুমের চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়েছিল আমায়। আমি বুঝতেই পারিনি , কখন আমি ঘুমের দেশে পৌঁছে গেছি। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিলেন তিনি। একেবারে শব্দহীন হয়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন আমার মনের কাঙ্ক্ষিত উপহার।

একটু বড় হলাম। জানতে চেষ্টা করলাম এই সান্তা কে ? ইতিহাসের পাতায় ইনি আছেন কি ? উত্তর অবশ্য একটা পেলাম। তাঁর সাবেকি নাই নাম নাকি সন্ত নিকোলাস। বা ক্রিস ক্রিংগ্লে।তিনি নাকি ভালো  ছেলে-মেয়েদের অনেক উপহার দিতেন। তাঁর নাকি একটা লাল জোব্বা ছিল। তাঁর মধ্যে থেকে বের করতেন সেই সব উপহার। তবে আরেকটি গল্প শোনা যায়। নিউ ইয়র্কে ক্লেমেন্ত ক্লার্ক মুর ও থমাস ন্যাস্ট এর হাত ধরেই নাকি জনপ্রিয় হয়েছিল আজকের বড়দিনের সান্তা। তারাই নাকি বড়দিনের আগের রাত্রে সমস্ত শিশুদের ঘরে পৌঁছে দিতেন উপহার। এয়াব্র আসি সন্ত নিকোলাসের কথায়। সন্ত নিকোলাস ছিলেন গোটা ইউরোপের একজন খুব জনপ্রিয় সন্ত। তিনি জন্মে ছিলেন খ্রীস্টের মৃত্যুর প্রায় ২৮০ বছর পর টার্কির পাটারাতে। অনেকে বলেন তাঁর দয়ালু চরিত্রের জন্য ও সমাজসংস্কারক হিসাবেই, তিনি সারা বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
আমরা আজকের যে সান্তা ক্লজের যে ছবি দেখি , সেটি কিন্তু এক শিল্পীর কল্পনা। ১৮৮১ সালে থমাস ন্যাস্ট আজকের আধুনিক সান্তার একটা ছবি একে ফেলেন। আর তাদের সেই ছবিই সারা বিশ্বে কাছে খুব অল্প সময়েই পরিচিত হয়ে ওঠে। একটু ফিরে যাই সন্ত নিকোলাস বা ক্রিংলের কথায়। তিনি মনে করতেন প্রত্যেক শিশুই খ্রীস্টের সন্তান। তারা সবাই খুব ভালো। তাই তিনি তাদের উপহার দিতেন।

এবার আসি আমাদের কথায়। আচ্ছা , আমাদের সান্তা ক্লজ চিঞ্ছে কি ভাবে ? সেই প্রশ্ন আজো প্রতিটি শিশুর মনে জাগে। সার বিশ্বের কোনায় কোনায় সমস্ত শিশুরা অপেক্ষা করে থাকে সান্তার জন্য। সে মনে মনে প্রার্থনা করে সান্তা তার  চাওয়াটাকে পুরণ করুন।আর সেই ভাবনা যখন তার মা বা বাবা জিজ্ঞেস করেন । সে কখন যে মনের অজান্তেই প্রকাশ করে ফেলে , সে জান্তেই পারেনা। সে ভাবে যে পুতুল সে কলকাতার একটি দোকানে দেখে বায়না করেছিল বাবার কাছে। বাবা নানা অজুহাত দেখিয়ে পুরণ করেনি সেই চাওয়াটাকে। সেই চাওয়াটা কত অবলীলায় সান্তা ঠিক বড়দিনের আগের রাতে দিয়ে গেল ? সে দোকানটাকে ঠিক চিনে নিয়ে এসেছে , সেই পুতুল, যেতা না পাবার জন্য খুব অভিমান করেছিল বাবার ওপর।

একটু বড় হয়ে, এক বড়দিনের আগের রাতে চিন্তে পেরেছিল আসল সান্তাকে। কে সেই আসল সান্তা। সে আর কেউ নয়। বাবা। যে তাঁর সন্তানের সামান্য চাওয়াটাকে নিঃশব্দে পুরণ করে চলে । সবার অজান্তেই। হয়ত তাঁর বল্গা হরিণের স্লেজ নেই। নেই ঐশ্বরিক ক্ষমতা। সে সন্তানের সমস্ত চাওয়া-পাওয়াকে মুল্য দেয় সম্মান জানিয়ে। সেটাই সব বড়দিনের ইশ্বরের আশীর্বাদ।