সবার ওপরে তৃনমূলের সিধান্ত, তাহার ওপরে কেহ নাই!

সৌরভ দত্তঃ  চুপিসারে দুই রাজ্যের কিছুটা অংশ ভেঙে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ে তুলতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। মূলত, বিহারের কিসানগঞ্জ, আরারিয়া, কাটিহার, পূর্ণিয়া অন্যদিকে বাংলার নিউ জলপাইগুড়ি ও সংলগ্ন কয়েকটি জেলা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার ভাবনা শুরু হয়েছে। এও জানা যায় যে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে গড়ে তোলা হলে বিহারের ৪০টি এবং পশ্চিমবঙ্গের ৮০টি বিধানসভা আসন থাকছে। গতমাসে সর্বভারতীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় এই তথ্যটি ফাঁস হতেই তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক মহলে। এরপর গ্রেটার কোচবিহার নেতা অনন্ত রায় মহারাজ জানান, ১০০ শতাংশ সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে, পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ঘোষণা এখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। অর্থাৎ ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ ভাগ হয়ে যাচ্ছে দাবি করেন তিনি। যদিও বিজেপি এপ্রসঙ্গে সংবিধান মেনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বলেছিল।

তবে, এবার উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য বা অংশবিশেষ কেটে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রসঙ্গ আমলই দিলেন না বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তথা এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল। আগামী দিনে উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কিংবা আলাদা রাজ্য হতে পারে কি না, জানতে চাওয়া হলে সোমবার বনসল বলেছেন, ‘‘বলছি তো, এমন কোনও আওয়াজই নেই ওখানে।’’ যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সম্প্রতি একাধিক বার বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্য ভাগের বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে কিছু জানানো হয়নি।

এদিকে, সুকান্তের দাবিকে প্রাধান্য না দিয়ে গ্রেটার কোচবিহার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা অনন্ত রায় দাবি করেছিলেন, বিজেপির রাজ্য সভাপতি কেন্দ্রীয় সরকারের কেউ নন। প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে তিনি এ-ও দাবি করেন, এ রাজ্যের অংশ নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়া সময়ের অপেক্ষা। উত্তরবঙ্গ সফরে আসা বনসলের সঙ্গে শিলিগুড়িতে সম্প্রতি দেখা করার পরেও নিজের দাবি থেকে সরেননি অনন্ত। যদিও সে দিনই বিজেপি সূত্রে বলা হয়েছিল, এমন কোনও বার্তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা বনসল দেননি অনন্তকে। কার্যত সেই কথারই উল্লেখ করে বনসল এ দিন দাবি করেন, ‘‘এমন কোনও বিষয়ে চর্চা-ই হয়নি।’’ পাশাপাশি অনন্তর পাল্টা খোঁচা, ‘‘আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের যদি আওয়াজই না থাকে, তা হলে বিজেপি এত আসন পেল কী ভাবে তার পরেও যদি উত্তরের গুরুত্ব না বোঝে, তা হলে আগামী দিনে উত্তরেও বিজেপি হাওয়া হয়ে যাবে।’’

অন্যদিকে বঙ্গভঙ্গ ভাগ নিয়ে তৃণমূলের দাবি, ২০২৪-এর আগে বিজেপি শেষ হয়ে যাবে। তৃণমূলের কথায়, বাংলা ভাগ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সুকৌশলে বিজেপি এই চক্রান্ত ছড়াচ্ছে। বাংলা-বিহার ভেঙে নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে চায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বারবার রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হচ্ছে বিজেপি। তা সহ্য করতে না পেরেই এই চক্রান্ত, উসকানি। তৃণমূলের প্রশ্ন, বছর দেড়েক আগে বিধানসভা ভোট হল। কেন সেই ভোটে এই বঙ্গভঙ্গের কথা বললেন না? নির্বাচনী ইস্তাহারে সে কথা কেন চিল না? যদি তখন সেটা বলতেন, তাহলে যে ভোট পেয়েছেন তার একটা ভোটও পেতেন না। তৃণমূল কংগ্রেস এই চক্রান্তের মোকাবিলা করবে। যদিও এবিষয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহের বক্তব্য, ‘‘মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক, জন বার্লা থেকে শুরু করে বিজেপির একাধিক বিধায়ক আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি তুলেছিলেন। তাঁরা কি এ বার ভুল স্বীকার করবেন’’