আগামী ২০ বছরে চাকরি হারাবেন প্রায় ৯০% মানুষ! Kodak ক্যামেরা কোম্পানি তাঁর জ্বলন্ত উদাহরণ

টুইটারে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথ ইতিমধ্যে অবলম্বন করেছে ফেবুবক, মাইক্রোসফটের মত নামীদামী কোম্পানিগুলি। তবে একসময় ১লক্ষের ওপর কর্মচারীকে একসঙ্গে ছাঁটাই করে রেকর্ড গড়েছিল কোড্যাক (Kodak ) নামক একটি কোম্পানি। মূলত, ১৯৯৮ সালে কোড্যাক কোম্পানিতে প্রায় ১লক্ষ ৭০ হাজার কর্মচারী কাজ করতেন। এবং বিশ্বে ছবি তোলার প্রায় ৮৫% ই কোড্যাক ক্যামেরায় তোলা হত। তবে গত একদশক ধরে মোবাইল ক্যামেরার বাড়বাড়ন্ত হওয়ায় এমন অবস্থা হয় যে Kodak ক্যামেরার কোম্পানীটাই উঠে যায়। এমনকি Kodak সম্পুর্ন দেউলিয়া হয়ে পড়ে এবং এদের সমস্ত কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক ছাঁটাই করা হয়। ওই একই সময়ে আরো কতগুলি বিখ্যাত কোম্পানি তাদের ঝাঁপ পাকাপাকি বন্ধ করতে বাধ্য হয়।

যেমন, HMT (ঘড়ি), BAJAJ (স্কুটার), DYANORA (TV), MURPHY (radio), NOKIA (Mobile), RAJDOOT (bike), AMBASSADOR (গাড়ি) এই উপরের কোম্পানিগুলোর মধ্যে কারুরই কোয়ালিটি খারাপ ছিল না। তবুও এই কোম্পানি গুলো উঠে গেল কেন? কারণ এরা সময়ের সাথে নিজেকে বদলাতে পারেনি। এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে আপনি হয়তো ভাবতেও পারছেন না যে সামনের ১০ বছরে দুনিয়া কতটা পাল্টে যেতে পারে! এবং আজকের ৭০%-৯০% চাকরিই সামনের ২০ বছরে সম্পুর্নভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে। আমরা ধীরে ধীরে ঢুকে পড়েছি “চতুর্থ শিল্প বিপ্লব”-এর যুগে। কারন, আজকের বিখ্যাত কোম্পানিগুলোর দিকে তাকান- UBER কেবলমাত্র একটি software-এর নাম। না, এদের নিজস্ব কোন গাড়ি নেই। তবু আজ বিশ্বের বৃহত্তম ট্যাক্সি-ভাড়ার কোম্পানি হল UBER। Airbnb হল আজকে দুনিয়ার সবথেকে বড় হোটেল কোম্পানি। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, পৃথিবীর একটি হোটেলও তাদের মালিকানায় নেই। একইভাবে Paytm, ওলা ক্যাব, Oyo rooms ইত্যাদি অসংখ্য কোম্পানির উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

আজকে আমেরিকায় নতুন উকিলদের জন্য কোন কাজ নেই, কারণ IBM Watson নামে একটি আইনি software যে কোন নতুন উকিলের থেকে অনেক ভাল ওকালতি করতে পারে। এইভাবে পরের ২০ বছরে প্রায় ৯০% আমেরিকানদের আর কোন চাকরি থাকবে না। বেঁচে থাকবে খালি বাকি ১০% । আর এই ১০% হবে বিশেষ বিশেষজ্ঞ। এদিকে নতুন ডাক্তারদেরও চাকরি যেতে বসেছে। Watson নামের software মানুষের থেকেও ৪ গুন নিখুঁত ভাবে ক্যানসার এবং অন্যান্য রোগ শনাক্ত করতে পারে। ২০৫০ সালের মধ্যে কম্পিউটারের বুদ্ধি মানুষের বুদ্ধিকে ছাপিয়ে যাবে। সামনের ৩০ বছরে আজকের ৯০% গাড়িই আর রাস্তায় দেখা যাবে না। বেঁচে থাকা গাড়িগুলো হয় ইলেক্ট্রিকে চলবে অথবা হাইব্রিড গাড়ি হবে। রাস্তাগুলো ক্রমশঃ ফাঁকা হতে থাকবে। পেট্রোলের ব্যবহার কমবে এবং পেট্রোল উৎপাদনকারী আরব দেশগুলি ক্রমশঃ দেউলিয়া হয়ে আসবে। তখন গাড়ি লাগলে, উবারের মত কোন software-এর কাছেই গাড়ি চাইতে হবে। আর গাড়ি চাইবার কিছুক্ষনের মধ্যেই সম্পূর্ণ চালক-বিহীন একটা গাড়ি আপনার দরজার সামনে এসে দাঁড়াবে। আপনি যদি অনেকের সাথে ওই একই গাড়িতে যাত্রা করেন, তাহলে মাথাপিছু গাড়িভাড়া বাইকের থেকেও কম হবে। গাড়িগুলো চালকবিহীন হবার ফলে ৯৯% দুর্ঘটনা কমে যাবে। এবং সেই কারণেই গাড়ি-বীমা করানো বন্ধ হবে এবং গাড়ি-বিমার কোম্পানি গুলো সব উঠে যাবে। গাড়ি চালানোর মত কাজগুলো আর পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে না। ৯০% গাড়িই যখন রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যাবে, তখন ট্রাফিক পুলিশ এবং পার্কিং-এর কর্মী-দেরও কোন প্রয়োজন থাকবে না।

ভেবে দেখুন, আজ থেকে ১০ বছর আগেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে STD বুথ ছিল। দেশে মোবাইল বিপ্লব আসার পর, এই সবকটা STD বুথই কিন্তু পাততাড়ি গুটাতে বাধ্য হল। যেগুলো টিকে রইল, তারা মোবাইল রিচার্জের দোকান হয়ে গেল। এরপর মোবাইল রিচার্জেও অনলাইন বিপ্লব এল। ঘরে বসেই অনলাইনে লোকে মোবাইল রিচার্জ করা শুরু করল। এই রিচার্জের দোকান গুলোকে তখন আবার বদল আনতে হল। এরা এখন কেবল মোবাইল ফোন কেনা-বেচা এবং সারাইয়ের দোকান হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সেটাও বদলাবে খুব শিগগিরই। Amazon, Flipkart থেকে সরাসরি মোবাইল ফোন বিক্রি বাড়ছে। টাকার সংজ্ঞাও পাল্টাচ্ছে। একসময়ের নগদ টাকা আজকের যুগে “প্লাস্টিক টাকায়” পরিণত হয়েছে। ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডের যুগ ছিল কদিন আগেও। এখন সেটাও বদলে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে মোবাইল ওয়ালেট-এর যুগ। Paytm, google pay , phon pay , bharat pay এর রমরমা বাজার, মোবাইলের এক টিপে টাকা এপার-ওপার। যারা যুগের সাথে বদলাতে পারে না, যুগ তাদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়। তাই ক্রমাগত যুগের সাথে বদলাতে থাকুন। সাফল্যকে সাথে রাখুন, সময়ের সাথে থাকুন।