বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র হতে চেয়েছিলেন উত্তম কুমার? এরপরেই আসল খেলা দেখিয়েছিল বাংলার মানুষ

1090

দীপক সেনগুপ্ত, অধ্যাপক: সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই টেলিভিশন বিভিন্ন বাড়িতে স্থান পেতে শুরু করে; এখন এ যন্ত্রটি নেই এরকম বাড়ি খুঁজে পাওয়া শক্ত। যদিও তার আগে এক সময়ে রেডিওই ছিল খবর ও অন্যান্য অনুষ্ঠান সম্প্রচারের একমাত্র মাধ্যম, এখন সে দায়িত্ব পালন করছে টেলিভিশন। কোন অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দৃশ্যের উপস্থিতি দর্শকমনকে আকৃষ্ট করে অনেক বেশি; সেজন্যই রেডিওর জৌলুষ এখন অনেকটাই স্তিমিত। হয়ত এর একমাত্র ব্যতিক্রম মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। টেলিভিশনের চেয়ে আকাশবাণীর এই অনুষ্ঠানটি এখনও লোকের কাছে অনেক বেশি প্রিয়। কিন্তু জানেন কি? ১৯৩৭ সাল থেকে পথচলা শুরু ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র প্রচার বন্ধ হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। উল্লেখ্য, দেশে জরুরী অবস্থা থাকাকালীন ১৯৭৬-এর ২৩ শে সেপ্টেম্বর মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’কে সরিয়ে ‘দেবী দুর্গতিহারিণীম’ নাম দিয়ে এক বিকল্প অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। রূপদান করেছিলেন অভিনেতা উত্তমকুমার, সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর প্রভৃতি স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ।

কিন্তু ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ স্থানচ্যুত হওয়ায় জনরোষ ফেটে পড়ে। পত্র-পত্রিকায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বরাবরই ভোর হবার আগে রাত্রিবেলাতেই বেতারকেন্দ্রে চলে আসতেন এবং ‘মহিষাসুরমর্দিনী ’ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থেকে তারপরে যেতেন। টেপ রেকর্ডারে অনুষ্ঠান চললেও এ অভ্যাস তিনি চালিয়ে গেছেন। কিন্তু ১৯৭৬ সালের পর থেকে তিনি আর কখনও রাত্রি বেলা যেতেন না। এই জরুরী অবস্থার সময়েই অপসারিত হন পঙ্কজকুমার মল্লিক ‘সঙ্গীত শিক্ষার আসর’ থেকে। অবশ্য জনসাধারণের চাহিদাকে মর্যাদা দিতে সেবছর ষষ্ঠীর দিন সম্প্রচারিত হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী।’ আর ১৯৭৭ থেকে স্বমহিমায় মহালয়ার ভোরে ফিরে আসে ‘মহিষাসুরমর্দিনী।’ ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি রচনা ও তরঙ্গায়িত করে বাণীকুমার যে আসাধারণ কাজটি করেছিলেন তৎকালীন স্টেশন ডিরেক্টর দিলীপকুমার সেনগুপ্ত সে প্রসঙ্গে বলেছেন – –

“বাণীকুমার যদি আর কোনো কাজ নাও করতেন, তাহলেও শুধু ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র জন্যই মানুষ তাকে মনে রাখত। …… শাজাহান যেমন তাজমহল গড়েছিলেন, যা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের একটা হয়ে আছে, আমাদের বাণীদা হাওয়ায় তাজমহল গড়ে গেলেন, যা মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।