আমাদের ছেলেবেলার মজার লোড-শেডিং এখন বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে!!!

দূর্বা দাশগুপ্তঃ যাদের এখন কুড়ির কোঠায় বয়স, অর্থাৎ, নব্বইয়ের দশকের যারা, তাদের কাছে একট শব্দ খুব পরিচিত। সেটা হলো লোড শেডিং। গরমের সন্ধ্যে বেলা। সবে বিকেলে খেলে এসে গা হাত পা ধুয়ে পাটিগণিত এর বইটা নিয়ে বসেছি, অমনি সারা পাড়ায় হায়হায় রব। কারেন্ট গেলো। আমার ভারি মজা। আর অঙ্ক করতে হবেনা। বারান্দায় বসে ঘামতে ঘামতে দু পাতা অঙ্ক বাটির মুড়ি চানাচুরের মতই তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যেত। তারপর “মা আর ভালো লাগছেনা, গরম লাগছে, মশা কামড়াচ্ছে” ইত্যাদি। মাও গরমে অতিষ্ট। “যা পারিস কর” বলে মুক্ত হলেন।

তখন আমার সব গরম উধাও। বাইরে বন্ধুরা ডাকছে “তিতির খেলতে আয়”। গরমের অন্ধকার রাস্তা তখন আমাদের কৈশোর যাপনের ঠিকানা। অন্ধকারে কুমির এসে ধরতে পারবে না যতই ডাঙার বাইরে থাকি। কুমির তো দেখতেই পাবেনা। পাড়ার একটু বড়ো দাদা দিদিরাও বেড়িয়ে পরেছে। পাড়া মুখর হয়ে উঠছে যৌবনের ফিসফাস আর কৈশোরের হাহা হিহিতে। এবার রাত দশটা বাজে। সবার বাড়ি থেকে ডাক পরেছে। এবার ফেরার পালা। ঘেমে নেয়ে ভীষণ খুশি মনে ফিরছি বাড়িতে। পিসি ঠাকুমা কাঁপা কাঁপা গলায় চিৎকার করছেন “তিতির রাত হয়েছে, বাড়ি যা।” দিয়ে বেরিয়ে এসে একটা মস্ত বড়একটা তিন ব্যাটারির টর্চ জ্বেলে আমাকে খুঁজবেন। মা মোম বাতি জ্বালিয়ে রুটি করবে। দিয়ে তিনজনে এক সাথে বসে মোমের কাঁপা কাঁপা আলোয় রাতের খাবার খাবো। তারপর বাবা বলবে “গরমে অতিষ্ট হয়ে গেলাম। আজকে বারান্দায় শোবো।”
ছোটবেলায় মনে হয় আনন্দটাই সব থেকে প্রবল অনুভূতি। সব কিছুর ওপর আদরের প্রলেপ মাখিয়ে দেয় আনন্দ। আমি প্রবল আনন্দে বারান্দায় কোলবালিশ টা জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরব, দেওয়ালের গায় মোমবাতির আলোর খেলা দেখতে দেখতে। মাঝ রাতে আধো ঘুমে দেখব ফ্যান টা চলছে। দেখে পাশ ফিরে আবার ঘুমের দেশে চলে যাব।

এখন লোডশেডিং হলে আনন্দ হয় না। বিরক্তি লাগে। ফোনের চার্জ থাকবে না, ওয়াইফাই থাকবে না, ওয়েব সিরিজ টা দেখা হবেনা, গরম লাগবে ইত্যাদি অনেক রকমের বিরক্তি।
লোডশেডিং টা আনন্দ থেকে বিরক্তি এই ঝাঁপ টাই মনে হয় বড়ো হয়ে যাওয়া।।