মুকুল বনাম কুনালের লড়াইয়ে আগামী দুবছর জমতে চলেছে বাংলার রাজনীতির ময়দান

78

সম্পাদকঃ  রাজ্যের রাজনীতিতে তখন উঠে আসছে নতুন মুখ। বাম জমানার অবসান ঘটনোর জন্য আপামর মানুষ ধীরে ধীরে গ্রহণ করছে তাঁকে। ইতিমধ্যে তিনি সাংসদ ও মন্ত্রী হিসাবে এন ডি এ’তেও সফল। বাংলার বাম বিরোধী রাজনীতিতে কংগ্রেসের থেকে বেরিয়ে এসে অগ্নিকন্যার তকমাও তাঁর গায়ে লেগেছে। বামেদের মৃত্যুঘন্টা বাজিয়েছেন তিনি। দু’হাজার সালের প্রথম দিককার কথা। তিনি তখন সঙ্গে কয়েকজন পেটোয়া সাংবাদিক নিয়ে ঘুরতেন। তাঁর থিঙ্ক ট্যাঙ্কের তথ্য সরবরাহ কারি তারাই। বিশেষ করে তিনজন তার সঙ্গে ছায়াসঙ্গীর মত থাকতেন। প্রবীর ঘোষাল , কুনাল ঘোষ ও আনিন্দ্য জানা। তিনজনই সেই সময়ে ঠিক করে দিতেন মমতাদেবী কি বলবেন মিডিয়ার সামনে। ঘটনা চক্রে সেই সময়ে আমরাও থাকতাম। কিন্তু মমতাদেবীর কৃপাদৃষ্টি থেকে একটু দূরেই থাকতাম। সেই সময়েই লক্ষ্য করা যেত , তিনি যতটা না পার্টির কাছের মানুষকে ভরসা করছেন, তার থেকে বেশি ভরসা করছেন এই সাংবাদিকদের।

মুকুল রায়ের জমানা এর আগে থেকেই শুরু। কেউ সেদিন ধর্ত্যব্যের মধ্যেই আনতে পারেননি যে একটি দলে তিনি কতটা অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে। বাঙালি রাজনীতিবিদদের চাণক্য তকমাটা প্রণব মুখার্জির দখলেই এতকাল ছিল। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে , সেই তিক্ষ্ণ ও ক্ষুরধার বুদ্ধির কিছুটা হলেও মুকুল রায়ের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পরিভাষায় খুব বাজে ভাবে যাকে বলে ফিটিং, সেটিং , ম্যানেজ । আর অবশ্যই শ্রুট।যাই হোক , সেই সময়ের সেই তিন সাংবাদিক সঙ্গীর দুজনকে মমতাদেবী সাংসদ বানিয়ে দিয়েছেন। ভাগ্যে সিকে ছেড়েনি আনিন্দ্যর।

এদিকে সম্প্রতি দল ছেড়েছেন মুকুল রায়। অনেকে বলছেন , যেদিন মুকুল দল ছেড়েছেন, সেদিন থেকেই রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের উল্টো গুণতি শুরু। একথা রাজনৈতিক মহলের একাংশ বললেও, তৃণমূল কংগ্রেসের মতে , কেউই অপরিহার্য নয় দলের ওপরে। যেখানে পুরো দলটাই একটি মানুষকে কেন্দ্র করেই চলে , তাঁর নাম ,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বাংলার বর্তমান চাণক্য , মুকুল কিন্তু ঠারে ঠারে বুঝিয়ে দিয়েছেন , তিনি দলে কতটা অপরিহার্য ছিলেন। আর তাঁর করিস্মায় ও চালে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ছে তৃণমূল কংগ্রেসের ঘর। দিশেহারা তৃণমূল তাই শরণাপন্ন আবার সেই পুরোনো মানুষদের কাছে। প্রবীর ঘোষাল আছেনই , কিন্তু কুণাল ঘোষ নেই। নানা মতপার্থক্য থাকায় দলের আবহ থেকে একটু দূরে। আর তিনি রাজনীতিটা একটু ভালো বোঝেন। বিশেষ করে রাজ্যের ক্ষেত্রে। সেই কুনাল ঘোষকে তড়িঘড়ি ডেকে পাঠালেন সুপ্রিমো ও যুবরাজ। ঘর ও গড় রক্ষার পথের হদিশ খুঁজে পেতে। আর কিভাবেই বা ঠেকানো যাবে , বিজেপি মুখী স্রোতকে ? কেননা মঞ্চে দাঁড়িয়ে মোদি যা বলে গেছেন , সেটা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর সেটাকে বাস্তব রুপ পাচ্ছে , সুপ্রিমোর কথায় গদ্দার, বাংলার রাজনীতির নতুন চাণক্য মুকুল রায়ের হাত ধরেই।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে কুনালের কাছে বেশ মাথা হেট করেই ফিরিয়ে আনার একটা চেষ্টা করা হচ্ছে , মুকুলকে আটকাবার জন্য। এদিকে আর একটু সুত্র মারফৎ জানা গেছে , দুটি পর্যায়ে আড়াই ঘন্টার একান্তের আলাপচারিতায় সুপ্রিমো ও যুবরাজ পথের দিশার সন্ধানই করেছেন। কেননা সামনের বছর দরজায় কড়া নাড়ছে কলকাতা পুরসভা মানে ছোট লাল বাড়ির ভোট , আবার একুশের বিধানসভা ভোটে নিজের দলের রাজ্যপাট রক্ষা করা। একদিকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দল হারিয়েছে সংযোগ , অন্যদিকে নানা কারণে ভোটাররাও বেশ খানিকটা মুখ ফিরিয়েছে শাসক দলের কাছ থেকে। যেটা কাঙ্খিত নয় অনেক আন্দোলন করে উঠে আসা তৃণমুলের কাছে। তাই ঘুরে দাঁড়াবার একটা মরীয়া চেষ্টা যেমন চলছে। তেমনি চলছে দলকে বাঁচাবার একটা প্রয়াস। দেখা যাক কুনাল বনাম মুকুলের বুদ্ধির মারপ্যাঁচ কেমন রাজনীতির ময়দানকে আলোকিত করে।