ভগবান শব্দের অর্থ কী? কাকেই বা আমরা ভগবান বলি?

ভগবান’ শব্দটি সংস্কৃত, এবং এর অর্থ বিশ্লেষণ করে ব্যাসদেবের পিতা পরাশর মুনি বলেছিলেন,
(১) সমগ্র ঐশ্বর্য(ধনসম্পদ)
(২) সমগ্র বীর্য(শক্তিমত্তা)
(৩)সমগ্র যশ
(৪) সমগ্র শ্রী(সৌন্দর্য, রূপবত্তা)
(৫)সমগ্র জ্ঞান
(৬)সমগ্র বৈরাগ্য যাঁর মধ্যে পূর্ণ-রূপে বর্তমান, সেই পরম পুরুষ হচ্ছেন ভগবান। তবে ভগ শব্দের অর্থ ছয়টি ঐশ্বর্য(ষড়ৈশ্বর্য) এবং বান শব্দের অর্থ যুক্ত বা সমন্বিত। যেমন জ্ঞানবান অর্থ জ্ঞান-সমন্বিত, ধনবান শব্দের অর্থ ধন-সমন্বিত, তেমনি ভগবান(পরমশ্বের ভগবান) শব্দের অর্থ যিনি সম্পূর্ণভাবে ৬টি ঐশ্বর্য সমন্বিত। ঐ সমস্ত ঐশ্বর্য আর্কষণ করে- আকর্ষনীয় ব্যক্তিতে পরিণত হবার এটিই রহস্য। কারও যে পরিমাণ এই ঐশ্বর্য থাকে, তিনি ততটাই আর্কষণীয় হন। এ জগতে সকলেরই ঐসব ঐশ্বর্য কিছু কিছু পরিমাণে রয়েছে-কিন্তু কেউই সমগ্র ঐশ্বর্য-সম্পন্ন নয়। অনেক ব্যাক্তি রয়েছেন যাঁরা অত্যন্ত ধনবান,খুব বলবান, খুব রূপবান, অত্যন্ত যশস্বী, খুব জ্ঞানী এবং অত্যন্ত বৈরাগ্যবান, কিন্তু কেউই দাবী করতে পারে না যে তাঁর সমগ্র ধনৈশ্বর্য, সমগ্র বলবত্তা, সমগ্র সৌন্দর্য ইত্যাদি রয়েছে-একমাত্র পরমেশ্বর ভগবানেরই এইগুলি পূর্ণমাত্রায় রয়েছে। উপরোক্ত ছয়টি ঐশ্বর্য যাঁর পূর্ণমাত্রায় আছে, তিনি নিশ্চয় ‘সর্বাকর্ষক’।

এদিকে বর্তমান সমাজের জ্ঞানী মানুষেরা জানিয়েছেন, বাংলা ভাষা তে যা ভগবান , ইংরেজি ভাষাতে তা গড, তাই আবার উর্দুতে খুদা, আরবি ভাষায় আল্লাহ, তাই গ্রিক ভাষাতে থিওস। তাহলে আশা করি বুঝেই গেছেন হিন্দুরা কাকে ভগবান মনে করেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত সৃষ্টি যাকে সর্বশক্তি-সর্বগুন-অগুনের অতীত মেনে নেয় বা না নেয়, তিনিই সেই। এক একজনের তাকে উপলব্ধি করার পন্থা আলাদা তাই বলে তিনি আলাদা কখনও নন। সহজ ভাবে বলতে গেলে – যে বস্তু পান করে সনাতন ধর্মী তৃষ্ণা নিবারণ করে তাকে বলে জল, সেই একই বস্তু পান করে ইসলাম অবলম্বনকারী তাকে বলে পানি, সেই বস্তু একজন খ্রিস্টান পান করে তাকে বলে ওয়াটার।

গঙ্গা থেকে সৃষ্টি হওয়া পদ্মা আর ভাগীরথী সেই আবার একই গন্তব্যে অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে, আবার সেই সাগর থেকে জলীয়বাষ্প গিয়ে গোমুখ গুহা তে বরফ উৎপাদন করছে। যতই বলি পদ্মার ইলিশ বিখ্যাত আর ভাগীরথী এর চিংড়ি বিখ্যাত, তাতে ভাগীরথীর ও কিছু এসে যায় না আর পদ্মারও কিছু এসে যায়না। তেমনি গঙ্গা বা বঙ্গোপসাগরেরও কিছু এসে যায়না। মাঝখান থেকে পূর্ববঙ্গের মানুষরা পদ্মার ইলিশ নিয়ে গর্ব করে মরে আর পশ্চিমবঙ্গের মানুষরা চিংড়ি নিয়ে।