রথযাত্রার ঠিক আগে প্রবল অসুস্থ হয়ে পড়েন জগন্নাথ! পৌরানিক সেই কাহিনী না জানলেই নয়

আগামী মঙ্গলবার জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম রথে চড়ে গুণ্ডিচার বাড়ি যাবেন (সেটি জগন্নাথের ‘মাসির বাড়ি’নামে পরিচিত) এবং সাত দিন পরে সেখান থেকে আবার নিজের মন্দিরে ফিরে আসেন। রথে চড়ে এই মাসির বাড়ি যাওয়াকে সোজা রথ মাসির বাড়ি থেকে ফিরে আসা উল্টোরথ নামে প্রচলিত। কিন্তু জানেন কি? ওই দিনের আগে থেকে গত ১৫ দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন জগন্নাথ? সুস্থ হওয়ার পরে যান মাসির বাড়িতে। কিন্তু কেন দেবতার এই অসুখ যাপন? এর পিছনে রয়েছে সুন্দর একটি গল্প। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সেই গল্প জগন্নাথ ও তাঁর ভক্ত মাধব দাসের গল্প।

মাধব দাস ছিলেন জগন্নাথের বিরাট ভক্ত। সংসারের সব কিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে কেবল জগন্নাথের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন মাধব। কিন্তু আচমকাই তিনি প্রবল অসুস্থ হয়ে পড়েন। বমি ও মলমূত্র ত্যাগ করতে থাকেন। এই অবস্থায় অন্যরা তাঁকে সাহায্য করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। মাধব জানান, তাঁর কোনও ভয় নেই। পরম আরাধ্য জগন্নাথ তাঁকে ঠিকই রক্ষা করবেন। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ দিকে যায়। পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন মাধব। কিন্তু তাঁর ভক্তি ছিল অটুট। শেষ পর্যন্ত ভক্তের কষ্ট দেখে তাঁকে সেবা করতে আবির্ভূত হন জগন্নাথ। তাঁর সেবাতেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন মাধব। জগন্নাথ মল-মূত্র লেগে থাকা মাধবের পোশাকও পরিষ্কার করতেন বলে জানা যায়। মাধব অবশ্য এসবের কিছুই জানতেন না। অসুখের ঘোরে তিনি প্রায় জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে ছিলেন। সংবিৎ ফিরতেই তিনি চমকে ওঠেন জগন্নাথকে দেখে। আপ্লুত মাধব জানতে চান, ‘প্রভু, আপনি কেন আমার সেবা করলেন? আপনি তো চাইলেই আমায় এক মুহূর্তে সুস্থ করে দিতে পারতেন দৈবী ক্ষমতায়!’

তখন জগন্নাথ জানান, প্রতিটি মানুষকে নিজের ভাগের কষ্টটা ভোগ করতে হয়। যদি তিনি মাধবকে আগেই সারিয়ে দিতেন, তাহলে মাধবকে এই অবশিষ্ট কষ্ট ভোগ করতে আবার জন্ম নিতে হতো। জগন্নাথ কখনই চান না, তাঁর কোন ভক্তকে কেবল কষ্ট ভোগ করার জন্য পুনর্জন্ম নিতে হয়। তবে পাশাপাশি জগন্নাথ এও জানান, মাধবের এখনও ১৫ দিনের অসুখ বাকি রয়েছে। তিনি ওই ক’দিনের অসুখ মাধবের কাছ থেকে নিয়ে নিতে চান। শেষ পর্যন্ত তাই হয়। মাধব সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর ভক্তের অসুখ নিজের শরীরে ধারণ করেন জগন্নাথ। সেই শুরু। সেই থেকে প্রতি বছর ১৫ দিনের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়েন জগন্নাথ। স্নান যাত্রার পরের ১৫ দিন অসুস্থ থাকার পরে হয় রথ যাত্রা। এই ১৫ দিন জগন্নাথকে ৫৬ ভোগ দেওয়া হয় না। মন্দিরের দরজা থাকে বন্ধ। তাঁকে আয়ুর্বেদিক ভেষজ ভোগ নিবেদন করা হয়। শীতল প্রলেপ লাগানো হয় জগন্নাথের মূর্তিতে। ভক্তের কষ্টে ভগবানের এত বড় কষ্ট স্বীকারের কাহিনি ফিরে ফিরে আসে প্রতি বছরের রথ যাত্রার সময়ে। জগন্নাথের কাহিনির সূত্রে তাঁর পরম ভক্ত মাধব দাসের কথাও স্মরণ করেন সবাই।