এই দিপাবলীর চমকপ্রদ আতস বাজি, দেবে ‘সোনার ডিম’

263

স্বপন দাসঃ চিনা বাজিকে টক্কোর দিতে তৈরি নুঙ্গি,চম্পাহাটি,উদয়নারায়নপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও জনাই এর আতসবাজি শিল্পীরা। বেশ কয়েক বছর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিয়ম মেনেই আতস বাজি বানিয়ে চলেছেন তাঁরা। দেওয়ালীর অন্ধকার, অমানিশার দিগন্তের কালো ক্যানভাস রঙিন হয়ে উঠবে তাঁদের সৃষ্টি করা নানা শিল্পকর্মে। যদিও সেই সব শিল্পীরা এবছর কিছুটা মৃয়মান নানা কারণে । সেই কারণ এই আনন্দঘন মুহূর্তে নাই বা বলা গেল। শুধু আমাদের রাজ্য কেন, দক্ষিণ ভারতের আতস বাজির শিল্পীরাও এই লড়াই এ সাথী।কেননা তাঁদের শিক্ষা তো এই দক্ষিণ ২৪ পরগণার নুঙ্গি থেকেই। একটু ইতিহাসের পাতা ঘাটা যাক। নুঙ্গির বাজি তৈরির শিল্প এসেছিল পাশের পুজালীর লাগোয়া অছিপুরের টং অছুর পরিবারের হাত ধরে। নুঙ্গি অঞ্চলের মানুষদের চিনারা , নিজেরদের জন্য আতসবাজির তৈরির ফর্মুলা শিখিয়েছিলেন । কেননা তাঁদের সব উৎসবের সঙ্গে জুড়ে থাকা আতস বাজি , সুদূর চিন থেকে আনার খরচ অনেক বেশি। দক্ষিণ ২৪ পরগণা থেকে এই শিল্প ছড়িয়ে পড়ে সারা রাজ্যে। এমন কি দক্ষিণ ভারতেও। ১৯২১ সালে নাদাল নামে এক দক্ষিণ ভারতীয় আসেন এই নুঙ্গি অঞ্চলে। তিনি এসে আতসবাজি তৈরি করা শেখেন। বিষয়টা আয়ত্বে এসে গেলে ফিরে যান দক্ষিণ ভারতে। আর দক্ষিণ ভারতে গিয়ে আতস বাজি তৈরি শুরু করেন। আজকের শিবকাশি অঞ্চল নাদালের সেই শিল্পকে ছড়িয়ে দেওয়ার ফসল।

চিনা দের সঙ্গে আতস বাজির লড়াইয়ের ময়দানে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি নন আমাদের দেশ তথা আমাদের রাজ্যের কয়েক লক্ষ প্রত্যক্ষ আতসবাজি শিল্পী ও কারিগর । মার্কেটিং এর কারণে এই মুহূর্তে নিজের ঝাঁপি থেকে লড়াই এর অস্ত্র ( নতুন বাজির হদিশ) কেউই বের করতে চাইছেন না। কেননা যদি নকল হয়ে যায় তাঁদের অস্ত্র । তবুও বেরিয়ে এসেছে বেশ কিছু আতস বাজির খবর।
এবারে আকাশে শিল্পীরা বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র ঘোরাবেন। হেঁয়ালি নয় , ঘটবে। সাধরণ ভাবে ,এটা আসলে রঙিন ঘুরন্ত এক মায়াবী আকাশ চরকা । যেটা ঘুরতে ঘুরতে ওপরে উঠে ঘুরতে থাকবে। আর রঙিন চ্ছ্বটায় ভরবে চারিদিক। একসময়ে এধরণের চরকা মাটিতে ঘুরত। এবার আকাশে ঘুরবে।এই বাজিটি চিনারা সৃষ্টি করেন নি। করেছেন আমাদের রাজ্যের আতসবাজির শিল্পীরা।
সবাইকে অবাক করবে এবছরের একেবারে নতুন একটি বাজি।মুরগি ডিম দেবে, সেই ডিমেও থাকবে আলোকচ্ছ্বটা। অনেকে বলছেন আতসবাজির মুরগি সোনার ডিম পাড়বে। দাম ২০০ টাকার আশেপাশে থাকবে। এটি কিন্তু বানিয়েছেন শিবকাশির আমাদের দেশের আতস বাজির শিল্পীরা।

রঙিন রং মশাল জ্বলন্ত অবস্থায় জলে ডুবেলেও , নিজের পেটের ভিতর থেকে রঙিন আলোর ঝুড়ি ছড়াতে থামবে না। সে যতই বৃষ্টি হোক না কেন ? রং মশাল জ্বলতেই থাকবে। নিভবেনা। জনাই এর আতসবাজির শিল্পী নরেশ রায়ের সৃষ্টি এটি।
সম্প্রতি ইসরো থেকে চন্দ্রযান ২ পাঠানো হয়েছিল চাঁদের মাটিতে বিক্রমকে পৌঁছে দিতে। এবার দেওয়ালীতে একটা বিশেষ ধরণের বাজি এসেছে । কালো রাতের আকাশে চন্দ্রযানের সেই যাওয়ার দৃশ্যটাকে এঁকে দিতে। রকেট আকাশের বুক চিরে যাবে। গিয়ে ফাটবে , আর চকচকে সোনালী রঙের বিক্রম নেমে আসবে আকাশ থেকে। অবশ্য চাঁদে নয় পৃথিবীর দিকে। দামটা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি বিক্রেতারা। এবছর রঙিন ধোঁয়ার শেল এর চাহিদা বেশ তুঙ্গে। এটি চিন থেকে আনা হচ্ছিল। এখন অবশ্য এখানেই তৈরি হচ্ছে। লাল,নীল সবুজ,হলুদ,সাদা সমেত ধোঁয়া বেরোবে শেল ফাটলেই। এখন এই ধরণের শেল খেলার মাঠে ফাটানো হয়। যেহেতু দিনের বেলাতেও খুব ভালো বোঝা যায়। তাই দেওয়ালীর দিনের পরিবেশকে রাঙ্গিয়ে তুলবে এই শেল।

আমাদের সবার কাছে চরকা বেশ জনপ্রিয়। সাদা আলোর চ্ছ্বটায় ভরিয়ে দেয় চারদিক। এবার একটি বড় আকারে একেবারে রঙিন চরকা আসছে দেওয়ালীতে। আর ঘুরবেও অনেকটা সময় ধরে। বেরোবে নানা রঙের ফুলকি।
আমাদের চেনা রকেট বোম্ব আসছে রকেট নামে।তবে আলোর মালায় থাকছে অভিনবত্ব। নানা ধরণের চরকির নাম পাল্টে হয়েছে স্পিনার। পাল্টা নামের আড়ালে কিন্তু আছে সেই চির পুরাতন সাবেকিয়ানা।
চিরাচরিত সব বাজিই থাকছে। সেই চরকা, ফুলঝুরি, মাল্টি কালার রং মশাল, ফ্লাওয়ার পট, জেনারেটর বাজি, ভুত বাজি সমেত সব কিছুই। তবে লাল হলুদ,সবুজ লাল, সবুজ রঙের রং মশালের চাহিদা বেশ ভালো।
এই প্রসঙ্গে বলা ভালো , এবারে বাজির দাম আগের বছরের থেকে কিঞ্চিৎ বেশি। প্রস্তুতকারকদের কথায় , কাঁচামালের দাম বেশি। আর নানা রকম কর এসে যাওয়ায় , একটু দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই তাঁদের।
বাজি কেনার একেবারে নির্ভরযোগ্য জায়গা , বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনের সহযোগিতায় চলা বাজি বাজার গুলি। তবে যদি উৎস স্থল থেকে বাজি কিনতে চান। তাহলে শিয়ালদহ থেকে বজবজ লোকালে নুঙ্গি অথবা ক্যানিং লোকালে চম্পাহাটিতে যেতে পারেন। আবার বাসে হাওড়া জেলার উদয়নারায়ন পুর বা হাওড়া থেকে জনাই বা পশ্চিম বা পূর্ব মেদিনীপুরও যেতে পারেন। দামে একটু সস্তা পাবেন উৎস স্থলে।