বাইজীদের নাচগান ছাড়া ব্রিটিশ আমলে রাজা-মহারাজাদের দুর্গাপুজো অসম্পূর্ণই থেকে যেত

216

পুরানো কলকাতার পুজোবাড়ীর আমোদ প্রনোদের একটা কর্ণনা ফ্যানী পার্কস তার ‘ভ্রমণ-বৃত্তা’-এ দিয়ে গেছেন। ফ্যানী পার্কস্ এক পুজোবাড়ীতে গিয়ে (১৮২০ খ্রীষ্টাব নাগাদ ) দেখেছিলেন পুজো মণ্ডপের পাশের একটা বড় ঘরে নানারকম উপাদেয় খাবার অঢেল পরিমানে সাজানো রয়েছে কর্তার সাহেব-অতিথিদের জন্য। খাবার সরববাহ করছেন বিদেশি পরিবেশক মেসার্স গান্টার অ্যান্ড গুপার। খাবার জিনিসের সঙ্গে বরফ ও ফরাসী মদও ছিল প্রচুর। মণ্ডপের আর এক দিকে একটা বড় ঘরে সুন্দরি বাইজীদের নাচগান হচ্ছিল। সাহেব ও এদেশীয় ভদ্রলোকেরা চেয়ারে বসে সুরাপান করতে করতে সেই নাচ দেখছিলেন। বাইজিদের গান শোনার জন্য বাইরেও বেশ লোকের ভিড় হয়েছিল। বাইজীদের নাচ গান সকলকে বেশ মাতিয়ে রেখেছিল।

কথিত আছে, যে দুর্গোৎসবে বাইজীর নাচ গান নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র প্রথম প্রবর্তন করেন। পরে এটা ভাগীরথীর ধারা ধরে নেমে এসে শোভাবাজার নবকৃষ্ণদেবের পূজা মণ্ডপে প্রবেশ করে। পরে কলকাতার অন্যান্য অভিজাত পরিবার তাকে অনুসরণ করেন । বলা বাহুল্য, কলকাতায় তখন বাইজীদের ছিল পোয়াবারো। কলকাতা শহরের পুজাবাড়ীতে নাচগান করে তারা হাজার হাজার টাকা কামাত। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের কলকাতার ইতিহাসে বেশ কয়েকজন বাইজী তাদের নামের ছাপ রেখে গেছে। তাদের নাচ গানের আসরে উপস্থিত থাকার নিমতন্ন পাবার জন্য কলকাতার সাহেব মহল উৎসুক হয়ে থাকত। আবার এই নর্তকীদের নিয়েও সেকালের বাবুদের লড়াই চলত। যে শ্রেষ্ঠ নর্ত কে আনতে পারবে, সাহেবদের চোখে তারই সামাজিক মর্যাদা সবচেয়ে বাড়বে। সে যুগের শ্রেষ্ঠ নর্তকী ছিল নিকী। প্রতি রাত্রে নাচগানের জন্য তার হাজার টাকা পারিশ্রমিক ছিল। হাজার টাকা পারিশ্রমিক তো সে যুগের যে কোন বড়লোকই দিতে পারত, কিন্তু তাকে পাওয়াই ছিল কঠিন। সাহেবদের কাছে নিকীই ছিল সে যুগের প্রধান আকর্ষণ। বোধ হয়, সে জন্যই কলকাতার কোন বড়লোক মাসিক হাজার টাকা বেতন দিয়ে তাকে নিজের কাছে রাখত । এটা তৎকালীন এক সাময়িক পত্র থেকে জানতে পারা গিয়েছে।