জানেন কি? কালী পুজোর দিন মায়ের সঙ্গে পূজিত হন তার চার বোন

328

শক্তি আরাধনার পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত আসমুদ্রহিমাচল৷ উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, সারা দেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন শক্তিপীঠ৷ এই বাংলায় শক্তি আরাধনা হিসেবে সবাই কালীপুজোকেই বুঝে থাকেন৷ এই দেবীকে ঘিরে সব জায়গাতেই জন্ম নিয়েছে বাস্তব-অবাস্তব, নানা উপকথা৷ অনেক জায়গায় বংশপরম্পরায় দেবীর পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন মৃৎশিল্পী ও পুরোহিতদের বংশও৷ দেবীর পুজোও নানা জায়গায় নানা উপাচারে করা হয়৷ কোথাও শ্মশানকালী, কোথাও ডাকাতকালী, কোথাও কালী পূজিত হন চামুণ্ডা রূপে, কোথাও কালী ভয়ংকরী, কোথাও বামা, কোথাও দক্ষিণা, কোথাও বা বরাভয়া । মূলত, রাত পেরলেই কালীপুজোয় মাতবে বাংলা৷ সেই স্রোতে গা ভাসাবে মালদা জেলার সাত থেকে সত্তরও৷

উল্লেখ্য, মালদা শহরের কালীতলা এলাকার কালীদের পাঁচ বোন এখনও পূজিত হন৷ এঁরা হলেন বুড়িকালী, ডাকাত কালী, কাঁচাখাওকি কালী, তারাকালী ও মশানকালী ৷ এর মধ্যে কালীতলা প্রথম  বুড়িকালী, ডাকাতকালী, কাঁচাখাওকি ও মশানকালীর মন্দির রয়েছে৷ তারাকালীর মন্দির রয়েছে চিত্তরঞ্জন পুরবাজারের সবজিপট্টি এলাকায়৷ শোনা যায়, প্রায় ৪০০ বছর আগে কালীতলা এলাকায় রাজত্ব করতেন ৫ ডাকাত৷ তাঁরাই এই পুজোগুলির প্রবর্তন করেন৷ মহানন্দা নদীতে বণিকদের নৌকায় ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ডাকাতরা শক্তির উপাসনা করতেন৷ এখনও কালীপুজোর দিন চার বোন মৃৎশিল্পীর ঘর থেকে একসঙ্গেই মন্দিরে যাত্রা শুরু করেন৷ তবে বর্তমানে বুড়িকালীর স্থায়ী মূর্তিতেই পুজো হয়৷

এদিকে, পুরাতন মালদা শহরের বেশ কয়েকটি কালীপুজো অতি প্রাচীন৷ তার মধ্যে অন্যতম ডাকাতকালীর পুজো৷ পুরাতন মালদা স্টেশন থেকে অনতিদূরে একটি পিতরিঙ্গা গাছের নীচে এই পুজো হয়ে থাকে৷ ডাকাতদের প্রবর্তিত এই পুজোর বয়সও অন্তত সাড়ে তিনশো বছর বলে স্থানীয়দের দাবি৷ এই পুজোতেও বর্তমানে বলিপ্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷

শুধু শহরাঞ্চলেই নয়, মালদা জেলার গ্রামেগঞ্জেও অনেক প্রাচীন কালীপুজো হয়ে থাকে৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সামসীর লস্করপুর সংলগ্ন পলাশতলা গ্রামের পুজো৷ ১১৮০ বঙ্গাব্দে এই পুজোর সূচনা হয়৷ এই পুজোর প্রবর্তন করেন তৎকালীন শ্রীপুরের জমিদার মহসিন আলি হোসেন চৌধুরি৷ প্রতিবছর এখানে শতাধিক পাঁঠা ও পায়রা বলি দেওয়া হয়৷ এছাড়া রয়েছে রতুয়া ২ ব্লকের গোবরজনা গ্রামের বিখ্যাত কালীপুজো৷ এই পুজোর সঙ্গে দেবী চৌধুরানি ও ভবানী পাঠকের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে৷ এখানকার কালীমূর্তি ভয়ংকরী৷ প্রতিবছর কয়েক হাজার ছাগবলি দেওয়া হয়৷ চাঁচল কালীবাড়ির ৩২৯ বছরের পুরোনো পুজোও গোটা জেলার মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে৷ মালতিপুর গ্রামে এই পুজোর প্রবর্তন করেন তৎকালীন চাঁচলরাজ রায়বাহাদুর ঈশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরি৷ এখানে দেবী পাথরকালী নামে পরিচিত৷ আগে বলিপ্রথা চালু থাকলেও এখন তা বন্ধ৷