ঝুলি থেকে বেরিয়ে এল আসল সত্য! কেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেন লিজ ট্রাস?

ক্ষমতার দেড় মাসও পার হয়নি। তার আগেই পদত্যাগ করতে হলো যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে। মাত্র ৪৫ দিন ডাউনিং স্ট্রিটের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। এর ফলে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে স্বল্পমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন ট্রাস। কিন্তু কেন? কী এমন হলো যে, এত আশা জাগিয়ে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও অল্প সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করতে হলো তাকে?

বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সামনে নিজের পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন করতে না পারার কারণেই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ডাউনিং স্ট্রিট থেকে দেওয়া ভাষণে ট্রাস বলেন, যুক্তরাজ্য দীর্ঘদিন ধরে নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে পিছিয়ে ছিল এবং তিনি তার দলের সাহায্যে এটি পরিবর্তন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘কম ট্যাক্স উচ্চ প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি’র জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল আমাদের সরকার। ট্রাস বলেন, আমি স্বীকার করছি… যে প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে কনজারভেটিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলাম, তা দিতে পারবো না। একটি বিশাল অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীলতার মুহূর্তে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন লিজ ট্রাস।

মাত্র দেড় মাসের শাসনকাল মোটেও স্বস্তিতে কাটেনি ট্রাসের। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার তিনদিন পরেই মারা যান যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার শেষকৃত্য এবং নতুন রাজার ক্ষমতাগ্রহণের নানা অনুষ্ঠানাদি সামলাতে হয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে। তবে সব সমস্যার মূলে রয়েছে তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ক্রমবর্ধমান দামের কারণে গৃহস্থালী পর্যায়ে জ্বালানি বিলের ওপর সীমা আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন লিজ ট্রাস ও তার প্রশাসনের প্রথম অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেং। গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিশাল ট্যাক্স ছাড় দিয়ে মিনি-বাজেট ঘোষণা করেন কোয়ার্টেং। এই বাজেটেই মাত্র ছয় মাসে ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জ্বালানি মূল্য স্কিম অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে এই বিপুল অর্থ কোথা থেকে আসবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না।

এই মিনি-বাজেট ঘোষণার পরপরই যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক বাজারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বাজেট ঘোষণার তিনদিন পরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের দর নেমে যায় ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। ফলে ট্রাস-কোয়ার্টেংয়ের আর্থিক নীতি নিয়ে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যেই মতবিরোধ দেখা দেয়। বিতর্কের মুখে গত ৩ অক্টোবর রেকর্ড ট্যাক্স ছাড়ের সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা পিছু হটেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও সমালোচনা থামেনি। শেষপর্যন্ত গত ১৪ অক্টোবর পদত্যাগ করেন কোয়ার্টেং। তার স্থলাভিষিক্ত হন আরেক কনজারভেটিভ নেতা জেরেমি হান্ট। দায়িত্ব পেয়েই তিনি কোয়ার্টেং, তথা লিজ ট্রাসের বেশিরভাগ পরিকল্পনা বাতিল করে দেন।

এছাড়া ফ্র্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে হাউজ অব কমনসে গতরাতের ভোটাভুটিতেও ব্যাপক নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়। ট্রাস চেয়েছিলেন গ্যাস উত্তোলনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে। কিন্তু পরিবেশগত ঝুঁকির আশঙ্কায় এর বিরোধিতা করেন টোরি এমপিদের একাংশ। এ নিয়ে ব্যাপক হট্টগোল সৃষ্টি হয় পার্লামেন্টে। এই বিতর্কের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ট্রাস ও অর্থমন্ত্রী হান্টের সঙ্গে অভিবাসী ইস্যুতে বিরোধে জড়ান ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যান। একপর্যায়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রীর পদত্যাগে লিজ ট্রাসের ওপর চাপ আরও বেড়ে যায় এবং শেষপর্যন্ত তিনিও সরকারপ্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।