নিজেদের স্বার্থের জন্য উন্নয়ন করেন স্বৈরাচারীরা! হিটলারের অটোবান তৈরি তারই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ

সারা বিশ্বের সঙ্গে জার্মানির সংযোগে সবার প্রথমে অটোবানের কথা মনে হয়। মসৃণ চওড়া রাস্তায়, দ্রুতগামী চ্যানেলে কোনো গতিসীমা নেই। মূলত, বিশেষ একটি কারণে জার্মান অটোবানকে অনেকেই চেনে এবং বেশ ভালোবাসে৷ সেটি হলো সাধারণভাবে অটোবানে কোনো গতিসীমা নেই৷ গোটা ইউরোপের মধ্যে একমাত্র জার্মান মোটরওয়েতে যত খুশি স্পিডে গাড়ি চালানো যায়–অবশ্য ট্র্যাফিকের আইন মেনে এবং নিজের বা পরের জন্য কোনো বিপদ তৈরি না করে৷ তবে এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷ সমালোচকরা বলেন, সাধারণ গতিসীমা থাকা পরিবেশের জন্য ভালো৷ এটি রাস্তার নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে৷

১৯৩৩ সালে স্বৈরাচারী শাসক হিটলার ক্ষমতায় এসে দাবি করেন, অটোবান তৈরির পরিকল্পনা। মূলত, কোলন আর বন শহরের মধ্যে ‘এ ৫৫৫’ অটোবান তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ১৯২৯ সালে। জার্মানির প্রথম ‘ইন্টারসেকশন ফ্রি’ গাড়ি চালানোর রাস্তা এটি। অটোবান শব্দটি যদিও পরে চালু হয়। এটিতে কোনোরকম ছেদ বা ট্রাফিক লাইট ছিল না, শুধুমাত্র বেরোনোর রাস্তা , জংশন এবং সবসময় কমপক্ষে দুটি লেন ছিল। মূলত, অটোবানের প্রথম অংশ নির্মাণে তিন বছর সময় লেগেছিল৷ কোলনের মেয়র এবং পরবর্তীতে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ারের এটি উদ্বোধন করেন ১৯৩২ সালে৷ তারিখটা ছিল ৬ অগাস্ট৷ এই তারিখ দেখেই স্পষ্ট নাৎসিরা এটি তৈরি করেনি, কারণ তারা তখনো ক্ষমতায় আসেনি৷ তারা ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৩৩ সালে৷

তবে অটোবানের গল্পটি স্বৈরাচারী শাসক অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে৷ ১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে হিটলার ক্ষমতা দখলের পর তথাকথিত ‘থার্ড রাইখ’ অটোবান নির্মাণের কাজ ত্বরান্বিত করেন৷ এই ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবিতে দেখা যাচ্ছে ১৯৩৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরে ফ্রাঙ্কফুর্ট/মাইন-মানহাইমের রাইখসঅটোবানের জন্য ভিত খনন করছেন তিনি৷ তবে যাই হোক, অটোবানের একটি অংশ মাত্র দুই বছর পরে খোলা হয়েছিল৷ এটিও প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে, নাৎসিদের যুক্তি ছিল, অটোবান তৈরি হলে ১৯৩০ সালের শুরু থেকে সারা বিশ্ব যে অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকছিল, তা মোকাবেলা করা যাবে৷ কারণ জার্মানিও তখন এই সমস্যায় জর্জরিত৷ এরপর বোঝা যায় অটোবানের দ্রুত নির্মাণ আসলে হিটলারের যুদ্ধের শুধুমাত্র প্রস্তুতির অংশ ছিল।

এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, বিশেষ করে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অটোবানগুলির পুনর্গঠন এবং সম্প্রসারণ কিন্তু বন্ধ হয়নি। অটোবানগুলির আধুনিকীকরণ করা হয় এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য বিনিয়োগ করা হয়৷ ১৯৬৯ সালের তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির পরিবহন মন্ত্রী, জর্জ লেবার তিনি ‘রেডিও এমার্জেন্সি কল সিস্টেম’ উদ্বোধন করেন, তখন এই ছবিটি তোলা হয়৷

উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে সারা বিশ্বে তেল সংকট ছিল চরমে। তখন রবিবারগুলোয় সারা দেশে গাড়ি চালানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি হয় এরপরে তখন মানুষের হাঁটার জন্য অটোবান খুলে দেওয়া হয়েছিল। তবে বর্তমানেও অটোবান নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। ৯০ বছর ধরে এখানে সবসময় মেরামতের কাজ চলছে। তবে ৯০ বছর পেরিয়েও বয়স বাড়েনি অটোবানের, সে একেবারে চিরতরুণ। তাই অটোবানকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা।