কোচবিহারের ১৯৭১-এর যুদ্ধ জয়ের স্মারক ‘প্যাটন ট্যাঙ্ক’

334

সন্দীপন পণ্ডিতঃ  আমাদের ছোটবেলায় তাকে দেখতাম চরম অবহেলায় রয়েছেন সাগর দিঘীর পাশে কোচবিহার রাষ্ট্রীয় গ্রন্হাগারের সামনে। মল মূত্র দূর্গন্ধে পরিপূর্ণ হয়ে। ভেতরে মদের বোতলের স্তূপ। দেহাংশও খুবলে নিয়ে গিয়েছে কেউ বা কারা বোঝা যায় একটু নজর দিয়ে দেখলে। এসব দেখে কেন জানিনা একটা মনখারাপের ঢেউ উথলে আসতো ভেতর থেকে।

তিনি আসলে ১৯৭১ -এর পূর্ব পাকিস্হানে যুদ্ধ জয়ের স্মারক, আমেরিকার তৈরী প্যাটন ট্যাঙ্ক। দিনাজপুর সেক্টরে ভারতীয় সেনার নেতৃত্বে থাকা কোচবিহারের কৃতী সন্তান তৎকালীন মেজর জেনারেল বীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনারা শত্রু সেনাদের এই প্যাটন ট্যাঙ্কটিকে কব্জা করেন। জলপাই রঙে রাঙা তাকে তো চেনেন কোচবিহারের অবালবৃদ্ধবনিতা। এখন অবশ্য দেখে বোঝাই যায় প্রাক্তন সৈনিক সংঘের ব্যবস্হাপনায় আছেন তিনি যত্নে।

যাইহোক! সেটা মোটামুটি ২০০২-২০০৩। হঠাৎই পেয়ে গেলাম উত্তরবঙ্গ সংবাদের সাংবাদিকতার চাকুরী, নিজের শহরে এবং কদিনের মধ্যে লিখে ফেললাম প্যাটন ট্যাঙ্কটির দুর্গতি নিয়ে একটি ফিচার। ভারতীয় সেনারা প্যাটন ট্যাঙ্কটিকে চিলা রায় ব্যারাকে আনার পর প্রশাসনের হাত ঘুরে প্যাটন ট্যাঙ্কটিকে সাগরদিঘীর সামনে এনে প্রতিস্হাপন করেছিলো কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতি এবং তৎকালীন সময়ে ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক ছিলেন কোচবিহারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্রীচাঁদ জৈন। আমি যখন সংবাদটি লিখছি তখন সেই পদে আসীন ছিলেন রাজেন্দ্র বৈদ। বিষয়টি তাঁর মোটেই জানা ছিল না। তিনি জানলেন খবর প্রকাশের আগের দিন সন্ধ্যায় আমার ফোনে।

পরেরদিন উত্তরবঙ্গ সংবাদে খবরটি প্রকাশিত হলো আর সেদিন সকালেই তাঁর উদ্যোগে প্যাটন ট্যাঙ্কের গায়ে পড়লো রঙের প্রলেপ। চত্বর হয়ে উঠলো ঝাঁ চকচকে। পাঠক খেকে সাধারণ মানুষ সবাই চমৎকৃত হলেন। সাধুবাদ দিলেন। এবং সেটাই ছিল তার দিন পরিবর্তনের শুরু।

এখন বেশ লাগে যখন তাকিয়ে দেখি তাকে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন যত্নে থাকা আমার প্রিয় শহরের প্যাটন ট্যাঙ্ক, তোমাকে! তোমাকে দেখে খুশীতে হাসতে থাকে আমার ছোট্ট মেয়ে! আমার দেহমন শিহরিত হয়ে ওঠে জাতীয়তাবোধে।