#কোচবিহারের দোতলা বাসে সফর

207

সন্দীপন পন্ডিতঃ  ১৯৪৫ সালে কোচবিহারের মহারাজা জগদীপেন্দ্র নারায়ণের হাতে তৈরী পরিবহন সংস্হা ভারতভুক্তির পর ক্রমে নাম বদলে হল উত্তরবঙ্গ রাষ্টীয় পরিবহন সংস্হা। আমার বাবা এই সংস্হার কর্মী ছিলেন। সংস্হার অন্যতম আকর্ষণীয় সম্পদ হল দোতলা বাস। শুনেছি, বিশেষ বিশেষ সময়ে নাকি এখনো পথে নামে তার দু একটি।

সংস্হায় একদম শুরুতে একজোড়া দোতালা বাস ছিল যার চালকের আসন ছিল মূল অংশেই। এখন যেমন বিদেশে দেখা যায়। পরে আরো দুজোড়া বাসের কথা মনে আছে যাদের চালকের কেবিন ছিল মূল অংশ থেকে আলাদা। একদম ছেলেবেলায় গ্রাম থেকে ঐসব দোতলা বাসে করে শহরের ইস্কুলে পড়তে আসা ছিল বড়ই মজাদার। প্রচুর হই হল্লোড় করতাম আমরা বিভিন্ন স্কূলের সহপাঠী বন্ধুরা দোতলা বাসের দোতালায় চড়ে আমাদের সেই নিত্য সফরে। অ্যালুমিনিয়ামের বইয়ের বাক্স বাজিয়ে কেউ কেউ সময়ে সময়ে তুলতো বেশ ভালো তাল।

মাঝেমাঝে খুবই ভীড় হতো বাসে। কেননা এত ধরনের এত গাড়ী ছিলনা তখন। গ্রামের পরিবহন ব্যবস্হা ছিল মূলত এই সংস্হার উপরেই নির্ভরশীল। সেই সব ভীড় দোতলা বাসের চালকের কেবিনে কথনও সখনও বাড়ীতে থাকলে উঠিয়ে দিতেন বাবা। তখন আমাকে পায় কে! মন দিয়ে দেখতাম গাড়ী চালনা, দড়ি বাঁধা টিং টং বেলের সিগন্যাল আর দোতলা বাস চালনায় লুকিং গ্লাসের গুরুত্ব।

আরো একটা মজা ছিল সেই দোতলা বাসে চড়ার। দোতলার একদম সামনের সিটে বসলে অনায়াসে ছোঁয়া যেত পথ লাগোয়া গাছের ডালপালা। কখনও হাতে আসতো কদম ফুল, কখনও বেল। তবে সবচেয়ে মজার ছিল আমের মরসুমে রেলঘুমটির রেললাইনের ঠিক উপরের গাছের আমকে হাত বাড়িয়ে ছিঁড়ে নেওয়া। কি যে অপূর্ব স্বাদ ছিল সেই গাছের কাঁচা আমের।

মাঝে মাঝে সখ হয় ফের চেপে বসি সেই দোতলা বাসে। দোতালার সামনের সিটে বসে হেলান দিয়ে বসে চলে যাই দূরে কোথাও নদীপুল শহর প্রান্তর পেরিয়ে। হয়তো বা আমার ফেলে আসা শৈশবে। হয়তো বা কোনো অজানা দেশে।
……………………………………………………………..

( দুই বছর আগের পোস্ট। আজকের দিনে। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্হার আধিকারিক কল্যাণ সোম কদিন আগে জানিয়েছেন, সর্বশেষ দোতলা বাসটিকে পাঠানো হয়েছে চেন্নাইতে সংরক্ষণের জন্য। সংরক্ষণ করছে বাস প্রস্তুতকারী সংস্থাটিই।)