বছরে ২ কোটি চাকরি, সবার অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা? কেন আপনার পঞ্চ-সঙ্কল্পে জায়গা পেল না মোদীজি?

সৌরভ দত্ত, সম্পাদকঃ আজ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ উপলক্ষে দেশবাসীকে ৫টি সংকল্প নিতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পঞ্চ সঙ্কল্পের প্রসঙ্গে মোদী বলেছেন, ‘‘আগামী ২৫ বছর দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বড় সঙ্কল্প নিয়ে এগোতে হবে আমাদের। তবেই স্বপ্নপূরণ হবে।’’ এই পাঁচটি সঙ্কল্পে ভারতের বিকাশ, দাসত্ব থেকে মুক্তি, উত্তরাধিকার নিয়ে গর্ব, ঐক্যবদ্ধ থাকা, এবং নাগরিক কর্তব্যে অবিচল থাকার কথা বলা হলেও বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি কথা উধাও। ২০১৪ সালে প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এসে কর্মসংস্থানের উপর জোর দেওয়া হবে। বছরে ২ কোটি বেকারের চাকরির সংস্থান করবে নাকি তাঁর সরকার। ৭ বছর অতিক্রান্ত। ২ কোটি তো দূরের কথা, বাস্তবে ২ লক্ষ কাজের সংস্থানও করতে পারেনি মোদী সরকার। এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবে এ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে আগামী পাঁচ বছরে ৬০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান কথা বলা হলেও প্রধানমন্ত্রীর নিদান মেনেই কাজ করছেন যুবকেরা! কারন তাঁদের মতে বেকার না থেকে পকোড়া ভাজলে বেকারত্বের জ্বালা তো খানিকটা ঘুচবে। এই তো গেল যুবকদের কথা কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে তৈরি হবে চাকরির সুযোগ? সেবিষয়ে মোদী সরকার জানিয়েছিলেন, তথ্যপ্রযুক্তি এবং অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলবে। তবে খবর নিলে দেখা যাচ্ছে এখন সেগুলিতেও কর্মী ছাঁটাইয়ে ব্যস্ত। অনেকের রোজগার কেড়েছে প্রধানমন্ত্রীর নোটবন্দি, ও করোনার লকডাউন। পাশাপাশি জিএসটি–র কোপে পড়ে বহু ক্ষুদ্র–মাঝারি শিল্পের সমস্যা বেড়েছে। মোদী সরকারের আর্থিক উপদেষ্টা স্বয়ং বলেছেন, নোটবন্দি–জিএসটি–র মতো অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ করার দরকার ছিল না। তবুও চমকপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী এসব করেছেন। বছরের পর বছর বাজেট হয়েছে, পরিকল্পনার পাহাড়প্রমাণ সৌধ গড়ে তোলা হয়েছে, কিন্তু কর্মসংকোচনের হার ক্রমশই বাড়ছে। চাকরির জন্য দেশজোড়া বেকার যুবকের হাহাকার আর্তনাদে পরিণত হয়েছে। স্বচ্ছ ভারত, গো রক্ষা, নোটবন্দি, মেক ইন ইন্ডিয়া, স্কিল ইন্ডিয়া, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, সবকা সাথ সবকা বিকাশ– এত রকমের চটকদারি স্লোগান তুলেও কর্মসংস্থানের দুঃসহ চিত্র ঢাকা যাচ্ছে না। এদিকে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেই সমীক্ষায় জানতে চাওয়া হয়, আগামী পাঁচ বছরে দেশের জন্য সবথেকে বড় প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জ কী হতে চলেছে? দেশের ৪৩% নাগরিকেরা মনে করেন, আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে চাকরি তৈরি। অর্থাৎ দেশের নাগরিকদের হাতে যথেষ্ট কাজ নেই বর্তমানে। তাই কাজ তৈরি করাই আপাতত, এই দেশের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে চলেছে। অন্যদিকে দেশের কেবলমাত্র ৩৯% নাগরিক মনে করেন, দেশ আগামী পাঁচ বছরে তাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলে। এই অংশের নাগরিকদের আশা, দেশ আগামী পাঁচ বছরে ব্যাপক সংখ্যক কর্মসংস্থানের পথে হাঁটবে। বাকি ১৮% নাগরিকেরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

এদিকে ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিদেশে সঞ্চিত সমস্ত কালো টাকা ক্ষমতায় আসার একশো দিনের মধ্যে উদ্ধার করা হবে । শুধু তাই নয়, যে পরিমাণ কালো টাকা বিদেশে জমা আছে, তা উদ্ধার করার পর দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া সম্ভব বলেও জানিয়েছিলেন মোদী। সেই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বিদেশে সঞ্চিত কালো টাকা উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এই নিয়ে নিয়মিত বিরোধীদের উপহাসের পাত্রও হয়ে উঠেছেন তিনি। বিভিন্ন সময় এই ইস্যুটিকে নির্বাচনী লড়াইয়ের হাতিয়ারও করে তোলেন বিরোধীরা। এই প্রেক্ষিতে একবার রাজনাথ সিং বলেছিলেন, অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা আমরা কখনই বলিনি। আমরা কালো টাকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলাম। আমাদের সরকারই কালো টাকা রুখতে সিট গঠন করেছিল।’

যাইহোক ১৫ লক্ষর কথা নয় এখন বাদই দেওয়া যাক! আমারা জানি, চপ বা পোকরা কোন শিল্পতেই পড়ে না । কর্মসংস্থান হতে গেলে দরকার অবাধ শিল্পায়ন । শিল্পায়ন মানে অপ্রতিহত গতিতে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠা। তাই বেকার সমস্যার রোগ সারাতে এই পরিষেবা আপনার পঞ্চ সঙ্কল্পে জায়গা পেল বড্ড খুশি হত যুবকেরা। দেখতেন আপনার অজান্তেই গড়ে উঠেছে উন্নয়ন ভারত। অপেক্ষা করতে হত না ২০৪৭ পর্যন্ত?