জেনে নিন, ট্রেনের দুর্ঘটনা ঠেকাতে ‘কবচ’ সিস্টেম কিভাবে কাজ করে?

ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যে অন্তত ২৯৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। আর আহত হয়েছে ৮৫০ জনের বেশি। অনেকেই ট্রেনের ভেতরে আটকা পড়েছেন। উদ্ধারকাজ এখনো চলছে। তাই হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে খবর। এবং এই দুর্ঘটনার পর আবারও আলোচনায় এসছে ‘কবচ’। ‘কবচ’ হল মূলত একটি সংঘর্ষ বিরোধী প্রযুক্তি। দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ কবচ’র মাধ্যমে এড়ানো যায়। ভারতীয় রেলের দাবি, এই প্রযুক্তি দুর্ঘটনা শূন্য রেল পরিষেবার জন্ম দেবে। এর ফলে দুর্ঘটনার হার হবে ১০ বছরে মাত্র এক বার। বলা বাহুল্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই অ্যান্টি কলিশন সিস্টেম প্রথম চালু করে রেল মন্ত্রক।

মূলত, ২০১২ সাল থেকে কবচ নির্মাণ প্রক্রিয়া চলছে। ২০১৪ সালে প্রথম এই প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়। কবচ প্রযুক্তিতে রয়েছে মাইক্রো প্রসেসর, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম এবং রেডিয়ো সংযোগ ব্যবস্থা। যাবতীয় আধুনিক প্রযুক্তি কবচ-এ ব্যবহার করা হয়েছে। এবিষয়ে ভারতীয় রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানান, ‘কবচ সিস্টেমটি এই রুটে নেই। বর্তমানে দিল্লি-হাওড়া এবং দিল্লি-বোম্বে রুটে কবচ স্থাপন করা হচ্ছে।’

ভারতের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ ঠেকাতে ‘কবচ’ সিস্টেমটি স্থাপন করা হচ্ছে। যখন কোনো ট্রেন ভুলবশত সিগন্যাল পার করে ফেলে, তখন কবচ ওই ট্রেনের চালককে সতর্ক করে। এই কবচ সিস্টেম ট্রেনের চালককে সতর্ক করতে পারে, ট্রেনের ব্রেকের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং নির্দিষ্ট দূরত্বে আরেকটি ট্রেনের উপস্থিতি টের পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন থামাতেও পারে। ভারতের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের ২ হাজার কিলোমিটার পথে এই কবচ সিস্টেম স্থাপন করার কাজ চলছে।

ফেব্রুয়ারিতে উত্তর প্রদেশে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর রেলওয়ে বোর্ডের সিনিয়র কর্মকর্তারা দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করেন, যার মাধ্যমে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রেলগাড়ি নিরাপদভাবে চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়গুলো নিয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কাজ করে তারা।

শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যা সাতটার দিকে বালাসোরের বাহাঙ্গাবাজার স্টেশনের কাছে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে হওড়াগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি ডাউন লাইনে ছিল। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ওডিশার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এই ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর মিনিট পাঁচেক পর আপ লাইন দিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিল চেন্নাইগামী শালিমার–চেন্নাই সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি। হঠাৎ এই ট্রেনেরও কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ সময় পাশের একটি লাইনে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল মালবাহী একটি ট্রেন। করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে প্রথমে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগিতে আঘাত করে। পরে করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকটি বগি আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী ট্রেনের ওপর গিয়ে আছড়ে পড়ে।