৮০০ কোটিতে পা দিল বিশ্বের জনসংখ্যা, জানুন…আর কতজন মানুষের ভার বহন করতে পারবে পৃথিবী?

বিশ্বের জনসংখ্যা আগামী ১৫ নভেম্বর দাঁড়াবে ৮০০ কোটিতে। আর এই ৮০০ কোটি জনসংখ্যার শেষ ১০০ কোটি হতে সময় লেগেছে ১২ বছর। তবে ৯০০ কোটি হতে প্রায় আরও ১৫ বছর অর্থাৎ ২০৩৭ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। কারণ বিশ্ব জনসংখ্যা বাড়ার সামগ্রিক হার ধীর হয়ে যাচ্ছে। এবিষয়ে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের প্রধান নাতালিয়া কানেম বলেন, ৮০০ কোটি জনসংখ্যা মানব সভ্যতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এ জন্য গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং মা ও শিশু মৃত্যুহার কমে আসাকে স্বাগত জানিয়েছেন । তিনি আরও জানিয়েছেন বলেন, আমি জানি যে এই মুহূর্তটি সবাই উদ্‌যাপন করবে না। বিশ্বে অতিরিক্ত জনসংখ্যা বলে কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আমি এখানে স্পষ্টভাবে বলতে চাই মানুষের এই সংখ্যা ভয়ের কোনো কারণ নয়।’ তবে বিশ্বের জনসংখ্যার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ অনুমান করছে, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ৮০০ কোটি হবে। ১৯৫০ সালে জনসংখ্যা ছিল ২৫০ কোটি। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের কর্মকর্তা রাচেল স্নো এএফপিকে বলেন, ১৯৬০ সালের দিকে বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ ২.১% হয়। ২০২০ সালে এটি ১% এর নিচে নেমে আসে। তবে জনসংখ্যার ক্রমাগত হ্রাসের কারণে এই সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ০.৫% এ নেমে যেতে পারে। প্রত্যাশিত আয়ু বৃদ্ধির পাশাপাশি সন্তান জন্মদান বৃদ্ধি পাওয়ার হারের বিষয়ে জাতিসংঘ বলছে, ২০৩০ সালে জনসংখ্যা ৮৫০ কোটি, ২০৫০ সালে ৯৭০ কোটি আর ২০৮০ সালের দিকে ১০৪০ কোটি হতে পারে।
যদিও ইউএস-ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই) ২০২০ সালের এক সমীক্ষায় বলেছিল, ২০৬৪ সালে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা সর্বাধিক বৃদ্ধি পাবে। তবে সেটা কখনোই ১০০০ কোটি হবে না। এমনকি ২১০০ সালে ৮৮০ কোটিতে নেমে আসবে জনসংখ্যার পরিমাণ। এবং ২০৫০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অর্ধেকের বেশি হবে মাত্র আটটি দেশ থেকে: গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, মিশর, ইথিওপিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন এবং তানজানিয়া।

জাতিসংঘের মতে, ২০২৩ সালের প্রথম দিকে মঞ্চে জনসংখ্যায় একে অপরকে পাল্লা দেবে এই দুই দেশ। চীনের ১০৪ কোটি জনসংখ্যা শেষ পর্যন্ত হ্রাস পেতে শুরু করবে। যা ২০৫০ সালের মধ্যে ১৩০ কোটিতে নেমে আসবে।
শতাব্দীর শেষ নাগাদ চীনা জনসংখ্যা মাত্র ৮০০ কোটিতে নেমে যেতে পারে। এদিকে ভারতের জনসংখ্যা বর্তমানে চীনের তুলনায় ঠিক নিচে। ২০২৩ সালে তার উত্তর প্রতিবেশীকে ছাড়িয়ে যাবে ও ২০৫০ সালের মধ্যে ১৭০ কোটি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে অধিক এ জনসংখ্যা কি পৃথিবীর জন্য বোঝা হয়ে দাাঁড়িয়েছে? অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, প্রশ্নটি ভুল। অতিরিক্ত জনসংখ্যা ভীতির পরিবর্তে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের গ্রহের সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহারের দিকে নজর দেয়া উচিত। এদিকে রকফেলার ইউনিভার্সিটির ল্যাবরেটরি অব পপুলেশনের জোয়েল কোহেন বলেন, কাদের জন্য অনেক বেশি, কিসের জন্য অনেক বেশি জনসংখ্যা? আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি কি অনেক বেশি মনে করি? না, আমি তা মনে করি না। তিনি বলেন, পৃথিবী কতজন মানুষের ভার বহন করতে পারে তার দুটি দিক রয়েছে, এক প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা এবং দুই হল- মানুষের পছন্দ। তারমধ্যে আমাদের পছন্দের পরিণতি হলো—এই গ্রহ প্রতিবছর যে পরিমাণ পুনরুৎপাদন করতে পারে, এর চেয়ে মানবজাতির অনেক বেশি জৈবিক সম্পদ ভোগ করে। যেমন বন, ভূমি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জীবাশ্ম জ্বালানির অত্যধিক ব্যবহার আরও বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। সেদিক দিয়ে তাকালে অধিক জনসংখ্যা ভবিষ্যতে বিপদের কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে।