কে এই সুজন চক্রবর্তী? জেনে নিন তার আসল পরিচয়

322

সুজন চক্রবর্তী। নামটা শুনলে প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে তিনি তো সিপিআইএম নেতা কিংবা যাদবপুরের বিধায়ক। তবে তাঁর আসল পরিচয় অনেকেরই অজানা! মূলত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। এর পর ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ফার্মাসিউটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি। কোনো জাল ডিগ্রি নয়, পড়াশোনাতে রীতিমত পরিশ্রম করে নিজের যোগ্যতা-তে পেয়ে যান ডক্টরেট ডিগ্রি। মূলত, ১৯৯৫ সালে গ্রিসের আন্তর্জাতিক ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটে একটি টিউমার মার্কার সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন, যা ওই দশকের সেরা এশীয় উপস্থাপন হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল।

তবে এরকম একজন শিক্ষিত মানুষ কেনই বা রাজনীতিতে পা রাখলেন? চাইলে তো নিজের জীবন-টা সুখ আর চার- পাঁচটে মানুষের মত স্বাচ্ছন্দ্যের বিলাস বহুল দিয়ে মুড়ে ফেলতে পারতেন, চাইলে পৃথিবীর উন্নতশীল যেকোন দেশে মাসিক লক্ষ লক্ষ টাকার চাকরি করতে পারতেন। চাইলে শহরের বুকে দামি ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল এসি গাড়ী, ঘড়ির কাঁটা ধরে নিয়ম মাফিক স্ত্রীর হাতে বানানো চিকেন রেজালা আর ইলিশ ভাপা-টা আয়েস করে খেতে খেতে ড্রইং রুমের ওই দামী সোফাতে বসে হাল্কা করে এসি-টা ছেড়ে দিয়ে আইফোন থেকে স্ট্যাটাস দিতে পারতেন- ‘‘রেললাইন কি শোওয়ার যায়গা?” কিংবা নিজের নির্বাচনী এলাকার মানুষদের খোঁজ খবর না নিয়ে, তাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে রেশনের ব্যাবস্থা না করে, নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কমিউনিটি কিচেনের সব সুষ্ঠ ভাবে চলছে কিনা তার তদারকি না করে একটু হিংসাও ছড়াতে পারতেন, কিংবা একটা রান্নার রেসিপি বা টিকটক ভিডিও বানাতে পারতেন। ভাবতেই অবাক লাগে এসব না করে লোকটা রাজনীতি করে বেরাচ্ছেন।

কানাইলাল চক্রবর্তীর পুত্র সুজন চক্রবর্তী ১৯৮৬-৮৮ সাল পর্যন্ত ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের রাজ্য শাখার বাঙালি অঙ্গ ছাত্র সংগ্রামের সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৮৮-৯৩ সাল পর্যন্ত এই সংগঠনের রাজ্য ইউনিটের সেক্রেটারি এবং ১৯৯৩-৯৪ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬-২০০০ সাল পর্যন্ত সুজন চক্রবর্তী সেন্টার অব ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস এর রাজ্য ইউনিটের সদস্য ছিলেন। পরে তিনি সেন্টার অব ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নসের জেলারেল কাউন্সিলের সদস্য হন। এরপর ১৯৯৮-২০০১ সাল পর্যন্ত সুজন চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য ছিলেন। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের অরূপ ভদ্রকে মাত্র ৫ ভোটে পরাজিত করেন। ২০০৪ সালে তিনি চতুর্দশ লোকসভা নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৫ই আগস্ট ২০০৭ তারিখ পর্যন্ত চতুর্দশ লোকসভার সদস্য থাকাকালীন তিনি অনেকগুলি কমিটির সদস্য ছিলেন যেমন – মানবসম্পদ উন্নয়ন কমিটি, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি কমিটি, পরিবেশ ও বন, কৃষি এবং গ্রামীণ শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ক্ষুদ্রতর শিল্প মন্ত্রণালয় উপদেশক কমিটি, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি কমিটি, পরিবেশ এবং বন কমিটি।এরপর ২০১৬ সালে তৃণমূলের মনিষ গুপ্ত হারিয়ে যাদবপুরের বিধায়ক হন। তবে উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে আজ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোন ক্রিমিনাল কেসও নেই। কিন্তু তার কর্মীসমর্থকেরা তার সমন্ধে যা ভাবেন তা হল, রাজ্যের শাসক দলের নেতারা ক্যামেরার সামনে যেভাবে হাত পেতে ঘুষ নিচ্ছেন, স্বঘোষিত দেশপ্রেমী দলের নেতারা ধর্মের নামে হিংসা ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এদের কারোর মুখেই অন্ন, বস্ত্র, কর্মসংস্থান নিয়ে একটা শব্দটুকু নেই। অথচ সরকারে না থেকেও সুজন বাবু গোসাবা, বাসন্তীর মত আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পায়ে হেঁটেই ঘুরে বেড়িয়েছিলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর খোঁজ নিয়েছিলেন, তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন। আসলে ইচ্ছেটাই বড় কথা, তাই তো সেই ইচ্ছের বশেই কেউ কেউ গরিব মানুষদের চাল চুরি করে আবার সুজন বাবুর মত কেউ কেউ নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনকে স্বেচ্ছায় দূরে সরিয়ে রেখে এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়ান, অসহায় মানুষদের কাঁধে ভালোবাসা মাখানো একটা হাত রেখে বলেন, ‘‘পাশে আছি সাথে আছি বন্ধু”…সুজন বাবু দের মত আমাদের রাজ্যের হাজার হাজার কমরেড-রা সেই কথাটাই রোজের বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে কিছু পেতে না, কিছু দিতে কমরেডরা রাজনীতিতে আসেন।