পয়সা খরচ করে বিদেশে নয়! স্বর্গ থেকে ঘুরে এসেছিলাম, লিখেছেন দূর্বা দাসগুপ্ত

242

 বেশিরভাগ ভাত ঘুম বাঙালির হাঁটার দৌড় হয় পাড়ার মোড়ের মুদির দোকান পর্যন্ত। সেই বাঙালি যখন trek করতে যায়, তখন অন্য অনেকের অনেক প্রশ্ন জাগে মনে। “পারবি অতটা হাঁটতে?”। “পয়সা খরচ করে মানুষে কষ্ট করতে যায়?” “অত যখন খরচ করবই, তখন bangkok-pataya টা করে আয়। বলতে তো পারবি বিদেশ গেছিলি!” সেই সব প্রশ্ন আর ভ্রু কুঁচকানো উপেক্ষা করে আমারা দশ জন বেরিয়ে পড়লাম হর কি দুন উপত্যকা জয় করতে।

দেহরাদুন থেকে প্রায় ৮ ঘন্টায় গাড়ি করে পৌঁছানো গেলো সাকরি গ্রামে। রাত্রিবাস সেখানেই। পরের দিন ভোরে আবার গাড়ি করে দশ কিলোমিটার উপক্রম করে পৌঁছলাম তালুকা। এখন থেকে হাঁটা শুরু। প্রথম দিন ৮ কিমি হেটে পৌঁছলাম আমাদের প্রথম camping site এ। চেল্লুগার। আকাশের মত নীল ছোট্ট ছোট্ট তাঁবু আমাদের অস্থায়ী সংসার।

পরের দিন পৌঁছনোর কথা ছিলো সীমাত্রা গ্রামে। কিন্তু ভয়ঙ্কর চড়াই পার করে আমরা সবাই এতই পরিশ্রান্ত হয়ে গেছিলাম যে মাঝ রাস্তায় তাঁবু ফেলতে হয়। পরের দিন বিকেলে পৌঁছলাম হর কি দুনে। নামকরণ সার্থক করে,উপত্যকাটি স্বর্গের চেয়েও সুন্দর। সামনে বিকেলের সূর্যের শেষ আলোয় ঝলমল করছে স্বর্গারোহিনী। নীচে চঞ্চলা, শ্রোতস্বীনি তমশা নদী(স্থানীয় ভাষায় tons)। বন দফতরের কুটিরে রাত্রিবাস। ফিরে আসার দিন ওসলা নামে এক ছবির মতো সুন্দর গ্রামে এক রাত কাটিয়েছিলাম। পরিচয় হয়েছিল হিমালয়ের সন্তানদের রোজকার জীবনের সাথে।সাত দিনের এই আপাত কষ্টকর ট্রেকটি সারাজীবন মনের মণিকোঠায় রয়ে যাবে এক অপূর্ব মধুর স্মৃতি হয়ে।

উল্লেখ্য, কুমায়ুন হিমবাহ অঞ্চলে মধ্য হিমলয় পর্বতশ্রেণি এবং শিবালিক পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী অংশে যে দীর্ঘ উপত্যকা আছে তাকে দুন বলে। মূলত, মূল হিমালয় সৃষ্টির অনেক পরে যেহেতু শিবালিক পর্বতের উত্থান, তাই মূল হিমালয়ের উর্ধাংশ থেকে আগত নদীগুলি শিবালিক পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অসংখ্য হ্রদের সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীকালে ওই হ্রদগুলি নুড়ি, কাঁকর, বালি, পলি ইত্যাদি দ্বারা ভরাট হয়ে দুন উপত্যকা সৃষ্টি হয়েছে।