সংসদ পদ কি হাতছাড়া হতে চলেছে মিমির?

165

ব্যবসায়িক স্বার্থের বিজ্ঞাপনে তিনি নিজের সাংসদ পদকে ব্যবহার করেছেন । এমনটাই অভিযোগ তুলে তৃণমূলের জায়েন্ট কিলার সাংসদ মিমি চক্রবর্তীর সাসংদ পদ চলে যাবার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে? বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রচারিত সংবাদ অনুসারে রাজনৈতিক মহল মনে করছে এই ব্যবসায়িক বিজ্ঞাপনে মিমি নিজেকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরার বিষয়টি সংসদের এথিক্স কমেটিকে অভিযোগ জানাতে চলছেন মিমির বিরোধী পক্ষরা!  যদিও এই অভিযোগটি খুব ধোপে টিকবে না,  তবুও একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে মিমির মানুষকে প্রভাবিত করার এই প্রচেষ্টাকে নিয়ে সংসদে ধিক্রিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
 
সম্প্রতি একটি চুলের তেলের বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, মিমি নিজেকে ‘জনপ্রতিনিধি’ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। এ কারণে ‘অফিস অব প্রফিট’ বিতর্কে পড়েছেন তিনি। যদিও এই বিজ্ঞাপনের কারণে ওই আইনের আওতায় মিমির সাংসদ পদ খারিজ হতে পারে কি না, তা নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সংশয় রয়েছে । কিন্তু সংসদীয় রীতিনীতি সম্পর্কে দীর্ঘ দিন দিন ধরে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁরা বলছেন, সাংসদদের আদর্শ আচরণ বিধিতে যে ‘স্বার্থের সঙ্ঘাত’ সংক্রান্ত নিয়ম রয়েছে, মিমি চক্রবর্তী তা সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করেছেন। তবে কি এই ‘অফিস অব প্রফিট’, জানা গিয়েছে, সাংসদ ও বিধায়ক হবার পাশাপাশি কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকারের অধিনস্থ কোনও পদ নিয়ে কেউ যদি আর্থিক ভাবে লাভবান হয়, তাহলে সেই পদ ‘অফিস অব প্রফিট’ আওতায় পরবে। আর মিমির এই বিজ্ঞাপন ‘অফিস অব প্রফিট’ এর আওতায় পড়ছে না বলেই দেখা যাচ্ছে । তাহলে এ বিষয় নিয়ে কেন বিতর্ক হচ্ছে? মূলত, প্রত্যেক সাংসদকে সংসদের এথিক্স কমেটির কাছে একটি শপথনামা দিতে হয় । সেখানে যে সব প্রতিশ্রুতি দিতে হয় সাংসদের দিতে হয় তার মধ্যে অন্যতম স্বার্থের সংঘাতে না জারানোর প্রতিশ্রুতিও । অর্থাৎ ব্যক্তিগত স্বার্থ ও জনস্বার্থের মধ্যে যে সংঘাত তৈরি হয়, এমন কোন কাজ তিনি করবেন না , আর সেদিকে তাকিয়েই এথিক্স কমেটিকে দেওয়া সেই শপথনামা লঙ্ঘন করছেন মিমি, বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে বিষয়টি নিয়ে মিমি জানান, এসব নিয়মকানুন তিনি জানতেন না। তাকে যা পড়তে বলা হয়েছিল, তিনি সেটাই পড়েছেন। তবে সংস্থার সঙ্গে কথা বলে বিতর্কিত অংশটি বাদ দেওয়ার কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী। এদিকে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘আমি বিজ্ঞাপন দেখিনি। তাই মন্তব্য করতে পারব না।’

উল্লেখ্য, ওই তেল কোম্পানির সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত মিমি চক্রবর্তী। সংস্থার বাংলা বিজ্ঞাপনের মুখ হিসেবে তাকেই দেখা যেত। এতদিন ‘অভিনেত্রী’ কিংবা ‘তারকা’ পরিচয় ব্যবহার করে ওই তেল কোম্পানির হয়ে প্রচার চালিয়েছেন মিমি। কিন্তু এবার বিজ্ঞাপনের সংলাপে ‘জনপ্রতিনিধি’ শব্দটি নিয়েই আপত্তি উঠেছে। বিজ্ঞাপনে তৃণমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তীর সঙ্গে বলিউড অভিনেত্রী বিদ্যা বালানকেও দেখা যায়। সেখানে দেখা গিয়েছে, একটি আয়নার সামনে বসে চুল বাঁধছেন মিমি। পেছন থেকে বিদ্যা হেঁটে এসে প্রশ্ন করেন, এখনও চুল নিয়ে পড়ে? জবাবে মিমি বলেন, আমি এখন জনপ্রতিনিধি, তার যোগ্য হেয়ারস্টাইল! এই দৃশ্য নিয়েই বিতর্কের সৃষ্টি।

অন্যদিকে নয়াদিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পীযূষকান্তি রায়ের মন্তব্য, ‘এ ভাবে বিজ্ঞাপনী প্রচার করাটা পুরোপুরি আইনসিদ্ধ হয়নি৷ একজন সাংসদকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, তিনি কখনই সাধারণ লোকদের মত ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে চলতে পারেন না৷ বিজ্ঞাপন যদি রাজ্য সরকারের তরফে বা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রচারিত হত, তা হলে অন্য কথা ছিল৷ বিষয়টি যদি সংসদের এথিক্স কমিটির কাছে যায়, তা হলে আমি অবাক হব না।’ সুপ্রিম কোর্টের আর এক আইনজীবী ও বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়ের কথায়, ‘এই ধরনের বিজ্ঞাপন অবশ্যই আইন বিরোধী৷ মনে রাখতে হবে একজন সাংসদ আইন প্রণেতা৷ ওঁর প্রোটোকল রয়েছে৷ সেই প্রোটোকল উনি নিজেই ভাঙলেন।’