বেতন বৃদ্ধি করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

56

সামনেই পুজো তার আগেই খুশির খবর দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।বেতন বাড়ছে আংশিক সময়ের শিক্ষক, চুক্তিভিত্তিক পূর্ণসময়ের শিক্ষক এবং অতিথি শিক্ষকদের। বদলে যাচ্ছে তাঁদের তকমাও। এক ছাতার তলায় আনা হচ্ছে তাঁদের। সোমবার হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণা করেছেন। তিনটি স্তরের শিক্ষকদেরই যোগ্যতার ভিত্তিতে ভাগ করে বেতন কাঠামো ঠিক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি বার্ষিক তিন শতাংশ করে ইনক্রিমেন্ট এবং গ্র্যাচুইটির পরিমাণ এক লক্ষ থেকে বাড়িয়ে তিন লক্ষ টাকা করারও ঘোষণা করেন মমতা। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত নন আংশিক এবং চুক্তিভিত্তিক পূর্ণ সময়ের শিক্ষকরা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই শিক্ষকদের নতুন নাম হবে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। এঁদের দু’টি বিভাগে ভাগ করা হবে। একটি হবে ক্যাটিগরি ওয়ান এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে ক্যাটিগরি টু। ইউজিসি নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা যাঁদের আছে, তাঁরা প্রথম ক্যাটিগরিতে পড়বেন। এঁদের মধ্যে যাঁরা ১০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, তাঁদের মাসিক বেতন হবে ৩০ হাজার টাকা। আর যাঁদের অভিজ্ঞতা ১০ বছরের নীচে, তাঁদের বেতন হবে ২৬ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, ইউজিসি নির্দিষ্ট যোগ্যতাহীন শিক্ষকদের মধ্যে যাঁদের চাকরি ১০ বছর হয়ে গিয়েছে, তাঁদের বেতন হবে ২০ হাজার এবং ১০ বছরের নীচে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের বেতন হবে ১৫ হাজার টাকা। সরকার নির্ধারিত এই বেতনের বেশি যাঁরা পেতেন, তাঁদের পে প্রোটেকশন দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, এই পে প্রোটেকশনের মাধ্যমে কারও বেতন কমবে না। এই সব শিক্ষকরা ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরির সুযোগ পাবেন। অবসরকালীন গ্র্যাচুইটি বাবদ তাঁরা এতদিন এক লক্ষ টাকা পেতেন। এখন তা বাড়িয়ে তিন লক্ষ টাকা করা হল।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার আগে কেমন ছিল এই শিক্ষকদের বেতন কাঠামো? আংশিক সময়ের শিক্ষক সংগঠন কুটাবের সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গ দেবনাথ বলেন, আগে যোগ্যতার নিরিখে কোনও ভাগাভাগি ছিল না। ১০ বছরের নীচে কর্মরত শিক্ষকরা পেতেন ১৪ হাজার ৮৮৪ টাকা। আর ১০ বছরের উপরে অভিজ্ঞতা যাঁদের, তাঁদের বেতন ছিল ২০ হাজার ৪৬৬ টাকা। সেক্ষেত্রে ইউজিসি যোগ্যসম্পন্ন শিক্ষকরাই লাভবান হয়েছেন। তাঁদের বেতন অনেকটাই বাড়তে চলেছে। অন্যদিকে, চুক্তিভিত্তিক পূর্ণ সময়ের শিক্ষকরা সবাই ২৫ হাজার ৯৫৩ টাকা পেতেন। এখানেও কোনও ভাগ ছিল না। মমতার এই ঘোষণার পর ইউজিসি যোগ্যতাধারী শিক্ষকদের বেতন এক লাফে অনেকটাই বাড়বে। এদিকে, অতিথি শিক্ষকরা বেশিরভাগ কলেজেই ক্লাস পিছু টাকা পেতেন। কোনও কলেজে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকাও দেওয়া হতো। সেক্ষেত্রে এই যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এই স্তরের শিক্ষকদের বেতন অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিনের অনুষ্ঠানে মমতা আরও জানান, প্রতি সপ্তাহে সরকারের নির্দিষ্ট করে দেওয়া সংখ্যার ক্লাস নিতে হবে এই শিক্ষকদের। তাঁদের নিয়োগপত্র উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের অনুমোদন নিয়ে দিতে হবে। স্বাস্থ্যসাথী, ছুটি সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তাঁদের দেওয়া যায় কি না, তা আলোচনা করে ঠিক করা হবে। যদিও এদিন মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়েছে কুটাব। গৌরঙ্গবাবুর কথায়, আগের সরকার অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়েছিল। এই সরকার যোগ্যতাকে দিল। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবসম্মত নয়, কারণ তিনি অভিজ্ঞতাকে উপেক্ষা করেছেন। সম কাজে সম বেতন এবং পূর্ণ সময়ের শিক্ষকের তকমার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল কুটাব। সেই আন্দোলনকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিসের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছে। সংগঠনের অভিযোগ, তাঁদের অনেক শিক্ষককে নিগ্রহ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা এবং নিগ্রহের প্রতিবাদে আজ, মঙ্গলবার কালা দিবস পালন করা হবে।