মমতার জন্যই সিঙ্গুর ছাড়লাম- বলেছিলেন রতন টাটা, একনজরে সিঙ্গুর সংঘাতের আসল চিত্র!

আজ বুধবার শিলিগুড়িতে দলের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে শিল্পায়নের প্রশ্নে সিঙ্গুর পর্ব নিয়ে মুখ খুলতে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য উঠে এল মমতার মুখে। সেখানে তিনি বলেন, “কেউ কেউ বাজে কথা বলে বেড়াচ্ছেন যে আমি টাটাকে তাড়িয়ে দিয়েছি, এখন টাটা চাকরি দিচ্ছে। টাটাকে আমি তাড়াইনি। সিপিএম তাড়িয়েছে। আপনারা লোকের জমি জোর করে দখল করতে গিয়েছিলেন। আমরা জমি ফেরত দিয়েছি। জায়গার তো অভাব নেই। আমি জোর করে কেন জমি নেব? আমরা এত প্রোজেক্ট করেছি, কই জোর করে তো জমি আমরা নিইনি। আমি পরিষ্কার করে বলি, আমাদের এখানে যত শিল্পপতি রয়েছেন, কারও মধ্যে ভেদজ্ঞান করি না। আমরা প্রত্যেককে চাই। তাঁরা বাংলায় বিনিয়োগ করুক। বিনিয়োগ করে এখানে দরকার হলে অনেক কর্মসংস্থান তৈরি করুক।” মূলত, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য সামনে আসতেই চটেছেন বিরোধীরা। হতবাক হয়েছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবে কি ছিল আসল সত্য তা একনজরে দেখে নেওয়া যাক …

সালটা ২০০৬ এর ১৮ মে: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শপথের দিন রতন টাটার ঘোষণা করেন সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা হবে । সাথেই তিনি জানান, রাজ্যে শিল্পায়নের শরিক হতে চাই আমরা। যে দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে প্রকল্প চূড়ান্ত করা হল, তাতে আমি খুশি।

২০০৬ এর ২৫ মে: ‘জোর করে’ জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে শুরু হয়ে বিক্ষোভ।

২০০৬ এর ১৭ জুন: বিক্ষোভের মাঝেই অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু। জারি হয় বিজ্ঞপ্তি।

২০০৬ এর ৩ ডিসেম্বর: আমরণ অনশনে বসেন মমতা। ২৫ দিন পর এই অনশন প্রত্যাহার করেন তিনি।

২০০৬ পর ২০০৭ এর ৬ মার্চ, টাটারা জানান বিনিয়োগের উপযুক্ত জায়গা পশ্চিমবঙ্গ। এই কথা হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস প্রকল্পের সময়ও আমি বলেছিলাম। তাই সিঙ্গুরকে বেঁছে নেওয়া হয়েছিল।

এরপর ২০০৮ এর ২২ অগস্ট: রতন টাটার ঘোষণা, হিংসা চললে প্রকল্প সরিয়ে নেব । রতন টাটার কথায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আমাদের ‘অবাঞ্ছিত বাসিন্দা’ বলে মনে করলে ‘অনিচ্ছা সত্ত্বেও’ আমরা সরে যাব।

২০০৮ এর ২৪ অগস্ট: প্রকল্প এলাকায় ধর্না শুরু তৃণমূলের

২০০৮ এর ১২ সেপ্টেম্বর: তথ্যকেন্দ্রে ফের দু’জনের বৈঠক। মাঝেই মমতার প্রস্থান।

২০০৮ এর ৩ অক্টোবর: রাজ্য থেকে প্রকল্প সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা রতন টাটার, সাথে বিস্ফোরক মন্তব্য করে তিনি জানান, বলেছিলাম বন্দুক ঠেকালেও যাব না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো ট্রিগার টিপে দিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের হিংসাত্মক আন্দোলনের জন্যই সিঙ্গুর ছাড়লাম।

২০০৯ এর ১ সেপ্টেম্বর: লগ্নির ক্ষতিপূরণ পেলে জমি ফেরত দিতে পারি।

২০১১ এর ২০ মে: শপথ নিয়ে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে সিঙ্গুরের জমি ফেরানোর সিদ্ধান্ত মমতার।

এরপর ২০১১ এর ১৪ জুনঃ বিধানসভায় ‘সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইন ২০১১’ পাশ।

২০১১ এর ২০ জুন আইনের গেজেট প্রকাশিত হয় নির্দেশিকা।

২০১১ এর ২১ জুন সিঙ্গুরের জমির দখল নেয় রাজ্য সরকার।

২০১১ এর ২২ জুন আইনকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে হাইকোর্টে যায় টাটা মোটরস।

২০১১ এর ২৯ জুন হাইকোর্টকে দ্রুত মামলা শেষ করতে বলে সুপ্রিম কোর্ট।

২০১১ এর ১৫ জুলাই বিচারপতি সৌমিত্র পালের এজলাসে শুনানি শুরু।

২০১১ এর ২৬ জুলাই ব্যক্তিগত কারণে বিচারপতির আসন থেকে সরে দাঁড়ান সৌমিত্র পাল।

২০১১ এর ২৮ জুলাই বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে ফের শুনানি শুরু।

২০১১ এর ১৬ সেপ্টেম্বর দুই পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষ হয়।

২০১১ এর ২৮ সেপ্টেম্বর রায়দানে বলা হয় সিঙ্গুর আইন সাংবিধানিক, বৈধ। টাটাকে ক্ষতিপূরণ দিক রাজ্য।

তবে এখানেই শেষ নয় ২০১১ এর ১ নভেম্বর রায়কে চ্যালেঞ্জ টাটাদের। ডিভিশন বেঞ্চে শুরু হয় শুনানি।

এরপর ২২ জুন ২০১২ রায়দানে বলা হয় সিঙ্গুর আইন অসাংবিধানিক ও অবৈধ।

উল্লেখ্য, রায়দানের পর সিঙ্গুর রায় নিয়ে মমতা জানান, আমি মন্তব্য করব না। সারা জীবন ধরে কৃষক, শ্রমজীবী, গরিব এবং সহায় সম্বলহীন মানুষের জন্য লড়াই করেছি। ক্ষমতায় থাকি বা না থাকি, এঁদের পাশে থাকার দায়বদ্ধতা থেকে আমি সরছি না। অন্যদিকে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, আমরা তো আগেই বলেছি, ওই আইন অসাংবিধানিক। বিকল্প প্রস্তাবও ওঁকে দেওয়া হয়েছিল। উনি জমি ফেরত দিতে চাইলে দিন, আমরা বিরোধিতা করব না। তবে ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক প্রভেদ করবেন না। জমি ফেরাতে হলে সকলকেই ফেরত দিন।