২০২১’শে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে যেসব জায়গার নাম বদলাবে?

98

ক্ষমতার যেমন পালাবদল ঘটে, সেই পালাবদলে অনেককিছুর নামও বদলে যায়। রাস্তায় রাজনীতি করে চেয়ার দখলের পর সেই রাস্তার নামই বদলে দেয়ার নজির ভারতে একেবারেই বিরল নয়।শুধু কি রাস্তা, রাজনীতির ছোঁয়ায় সহসা বদলে যায় শতাব্দী প্রাচীন শহরের নাম। দিন কয়েক আগেই ইলাহাবাদ নাম বদলে হয়ে গেল প্রয়াগরাজ। এবার পালা পশ্চিমবঙ্গের নানা শহর ও জনপদের।

তবে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামটি বদলাতে না চাইলেও, সে রাজ্যের একাধিক স্থানের নাম বদলের দাবি জানিয়েছে গেরুয়া শিবির। রাজ্যের শাসন ক্ষমতা দখলের পর নাম বদলের পরিকল্পনা সফল হবে, এ কথা জানালেও এরই মধ্যে সাংগঠনিক স্তরে বেশ কিছু জায়গার নাম ‘বদলে ফেলেছে’ গেরুয়া বাহিনী।তবে বিজেপি-সংঘ পরিবার-বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো সংগঠনগুলোর এই ‘পরিকল্পনার’ মধ্যে ‘মৌলবাদী চিন্তাভাবনার প্রতিফলন’ দেখছে রাজ্যের একাংশ।

এখন মমতা ব্যানার্জি এবং অতীতে বামেরা পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলাতে চাইলেও এ বিষয়ে তীব্র বিরোধিতা রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। তবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো এ রাজ্যের বেশ কিছু এলাকার নাম পরিবর্তন করতে চাইছে। এ বিষয়ে ভিএইচপি-র মতো সংগঠনগুলো এতটাই সক্রিয় যে প্রশাসনিক স্তরে পত্র বিনিময়ের ক্ষেত্রে এরই মধ্যে নাম বদল করে ফেলেছে তারা।যেমন, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুককে ‘তাম্রলিপ্ত’, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরকে ‘ঈশ্বরপুর’, মুর্শিদাবাদের বহরমপুরকে ‘ব্রহ্মপুর’ নামেই সাংগঠনিক কাজে মান্যতা দিচ্ছে তারা। তালিকা এখানেই শেষ নয়, রাজ্যের আরো বেশ কিছু এলাকার নাম পরিবর্তনের দাবি রয়েছে এই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্বাঞ্চলীয় সম্পাদক (সংগঠন) শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ব্রিটিশ ও মুঘলরা যারা একদিন এখানে রাজত্ব করেছে, তারা চলে গেছে। তাই তাদের দেয়া নাম অবশ্যই পরিবর্তন হওয়া উচিত। সরকারি মান্যতা না থাকলেও তাম্রলিপ্তকে আমরা সাংগঠনিক জেলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। লেটার হেডে তাম্রলিপ্ত লিখেই থানা বা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পত্র আদান-প্রদান করি। তাতে কোনো অসুবিধা হয় না। আমাদের কার্যকর্তারা সহজেই বহরমপুর নয়, ব্রহ্মপুর বলেন। ইসলামপুরও আমাদের কাছে ঈশ্বরপুর। মহাদেববাজার বলছি মুহাম্মদবাজারকে।

শচীন্দ্রনাথের কথায়, মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে দিতে চাইছেন। কিন্তু ‘বাংলা’ আমরা মানি না। অন্যদিকে ব্রিটিশরাও অনেক ক্ষেত্রে নাম পাল্টে দিয়েছিল। কিন্তু, ব্রিটিশরা চলে গেছে, ফলে তাদের দেয়া নাম থাকার কী দরকার। পরাধীনতার গ্লানি মুছে ফেলতে হবে।

রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চোধুরিও রাজ্যে নানা স্থানের এই নাম পরিবর্তনের দাবির সঙ্গে সহমত। তিনি সাফ বলেন, অনেক শহরের নাম বদলের চিন্তা ভাবনা আছে। রাজ্যে আমাদের সরকার ক্ষমতায় এলে অবশ্যই মতামতের ভিত্তিতে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও দেশের জন্য যারা কাজ করেছেন, সেইসব কবি-সাহিত্যিক-ঋষিদের নামে নামকরণ করার কথা ভাবা হবে। রাস্তাঘাট-সহ বিভিন্ন জায়গার নামকরণ করার চেষ্টা করব।

এদিকে ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’ সংগঠনের আহ্বায়ক মোহিত রায় বক্তব্য, যেসব স্থানের নাম পাল্টে দেয়া হয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনতে হবে। রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হলে আমরা ওই সব স্থানের নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করব।

অধ্যাপক তথা পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি এই ধরনের নাম পরিবর্তনের পরিকল্পনাকে মৌলবাদী চিন্তাভাবনা বলেই মনে করছেন। তিনি বলেন, তারা (গেরুয়াশিবির) ইতিহাস বোঝে না। ইতিহাসের ভাবনা কিছু নেই। মুসলিমরা ছিল শাসকদল। এখানে যারা এসেছিলেন, তারা বহুকাল ছিলেন। তাদের কৃষ্টি তো আর উঠে যায়নি। কৃত্তিবাস সৃষ্টি হয়েছিল ইলিয়াস শাহের সময়। সিরাজ-উদ-দৌলাকে ভুলে যাব! এটা একটা মৌলবাদী ভাবনা ছাড়া কিছু না। মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আরেক মৌলবাদী চিন্তাভাবনা। তারা বাংলা নামটাই দিলেন না। আমরা বাংলা নামের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ওরা কি না তাম্রলিপ্তের চেষ্টা করছে!