মমতার নির্দেশমতো তৃণমূলে বড়সড় রদবদল করলেন শুভেন্দু!

বিজেপিকে রুখতে খুঁটি সাজাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে এবার তৃণমূলে সাংগঠনিক রদবদল করলেন শুভেন্দু অধিকারী।জেলার পর্যবেক্ষকের নির্দেশমতো জয়পুর ও ইন্দাসে ব্লক কমিটি ভেঙে দিল তৃণমূল কংগ্রেস।

উল্লেখ্য,বুধবার বাঁকুড়ায় জেলা তৃণমূল ভবনে আয়োজিত বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই দু’টি ব্লক কমিটিকে ভেঙে কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংগঠন মজবুত করা এবং দলের ব্লক সভাপতিদের একচ্ছত্র আধিপত্য রুখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। নতুন কমিটিতে জয়পুরে ৯জন এবং ইন্দাসে ১৩ জনকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। তাতে সভাপতির পদ আপাতত তুলে দিয়ে একজন করে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এবার থেকে যে কোনও দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে রেজ্যুলিউশন করা হবে। এতে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমবে বলে দলীয় নেতারা আশা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের পঞ্চায়েত, গ্রামোন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা বলেন, দলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তরফ থেকে ভূরিভূরি অভিযোগ এসেছে। দলের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশে আপাতত দু’টি ব্লকে সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এদিন জয়পুর ও ইন্দাস ব্লকে পুরনো কমিটি ভেঙে নতুন কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলের ব্লক সভাপতির পদ আপাতত তুলে দেওয়া হয়েছে। দলীয় যে কোনও সিদ্ধান্তে একক সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। কমিটিতে একজনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তিনি কর্মসূচি আহ্বান করবেন। কমিটিতে আলাপ আলোচনার পর যাবতীয় সিদ্ধান্ত ওই কমিটিই নেবে। দলের স্বার্থে দীর্ঘদিনের ব্লক সভাপতিদের সরানোর মতো কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগামীদিনে অন্যান্য ব্লক এবং পরবর্তীকালে অঞ্চল স্তরেও একই ভাবে ব্যাপক রদবদল করা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়পুর ও ইন্দাসে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে প্রকট ছিল। দুই ব্লকেই দলের অন্যান্যদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে এক শ্রেণীর নেতাদের বিরুদ্ধে একচ্ছত্র রাজ চালানোর অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে ব্লক সভাপতিদের বিরুদ্ধে দলের সামগ্রিক বিষয়ে একক সিদ্ধান্তের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু, তা নিয়ে এতদিন কোনও সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাতে মানুষের ক্ষোভের পাশাপাশি দলের মধ্যেই বিভেদ তৈরি হয়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে দলের একাংশ এবারের লোকসভা ভোটে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দলের একাংশ বাইরে তৃণমূল করলেও ভিতরে ভিতরে বিরোধী প্রার্থীর হয়ে ভোট করিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সব মিলিয়ে এবারের লোকসভা ভোটে জয়পুর ও ইন্দাসে দুই জায়গাতেই তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল সাঁতরা বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁয়ের চেয়ে কম ভোট পান।
সম্প্রতি বাঁকুড়ার নতুন দলীয় পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী বিষ্ণুপুরে এসে সাংগঠনিক কর্মী বৈঠক করে গিয়েছেন। সেখানে তিনি আগামী তিন মাসের মধ্যে দলকে চাঙ্গা করার আশ্বাস দেন। তার জন্য এলাকায় জনসংযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি ঔদ্ধত্য দেখানো নেতাদের ক্ষমতা খর্ব করার নির্দেশ দেন।

তৃণমূল সূত্রে খবর, জয়পুর ও ইন্দাসে এতদিন দলের ব্লক সভাপতি ছিলেন যথাক্রমে স্বপন কোলে ও শেখ ররিয়োল হোসেন। দু’জনকেই ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে। তবে তাঁদের নতুন কোর কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়েছে। জয়পুরে কোর কমিটিতে রয়েছেন ইয়ামিন শেখ, স্বপন কোলে, রবিয়াল আলি মিদ্যা, উজ্জ্বল প্রতিহার, জাকির খাঁ, বাবর আলি কোটাল, সোমনাথ পান, নবকুমার রুইদাস ও মহাদেব কুণ্ডু। তাঁদের মধ্যে আহ্বায়ক করা হয়েছে জয়পুরের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ইয়ামিন শেখ।
অপরদিকে, ইন্দাসে কোর কমিটিতে রয়েছেন গুরুপদ মেটে, শেখ রবিয়োল হোসেন, গৌতম বেরা, শেখ হামিদ, নিমাই মহন্ত, কুন্তল মণ্ডল, নাসের মোল্লা, রামপ্রসাদ ঘোষ, আশিস গোস্বমী, চন্দন রক্ষিত, পঙ্কজ মাজিলা, বিশ্বনাথ ঘোষ ও নীহার সরকার প্রমুখ। তার মধ্যে আহ্বায়ক হয়েছেন ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটে। এবিষয়ে শেখ রবিয়োল হোসেন বলেন, সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে বলে আমি খবর পাইনি। তবে আমি দলের অনুগত সৈনিক। দল আমাকে যা দায়িত্ব দেবে নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করব। একই মন্তব্য করেছেন জয়পুরের সদ্য প্রাক্তন ব্লক সভাপতি স্বপন কোলে।