ভারতের ইতিহাসের মারাত্মক কিছু রেল দুর্ঘটনা, যার কাহিনী শুনলে আজও গায়ে কাঁটা দেয়

আস্ত এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে বালেশ্বর। ড্রোন ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, বাহানাগা স্টেশনে খেলনা গাড়ির মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তিন তিনটি ট্রেনের একের পর এক বগি। মালগাড়ির মাথায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন। যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে লাশ। চারিদিকে চাপ চাপ রক্ত। মূলত, শুক্রবার বালেশ্বর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বাহানগা বাজার স্টেশনে সন্ধে পৌনে ৭টা নাগাদ এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শালিমার থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস, হাওড়া-যশোবন্তপুর হামসফর এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। হু হু করে বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা। আহতর সংখ্যা ৯০০ র বেশি। ইতিহাাস ঘেঁটে দেখলে দেখা যাবে, স্বাধীনতার পর ঘটে যাওয়া ট্রেন দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে এমন মারাত্মক দুর্ঘটনার সংখ্যা হাতেগোনাই। তাহলে চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক, ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক কিছু ট্রেন দুর্ঘটনা ।

তালিকায় সর্বপ্রথমে রয়েছে পামবান-ধনুস্কোডি প্যাসেঞ্জার ট্রেন ২৩ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৪ সালে রামেশ্বরমে ঘূর্ণিঝড়ের কারনে ট্রেনটি উল্টে যায়, এতে ১২৬ জনেরও বেশি যাত্রী নিহত হয়।

এরপর ৮০ দশকে ১৯৮১ র ৬ জুন। বিহারে ঘটে যায় একটি মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা। সেতু পার হওয়ার সময় একটি ট্রেন বাগমতি নদীতে পড়ে যায়। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ৭৫০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যান।

তারপর ১৯৯৫ সালের ২০ অগাস্ট। ফিরোজাবাদের কাছে পুরুষোত্তম এক্সপ্রেসের সঙ্গে স্থির কালিন্দী এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয়। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০৫।

তাঁর ৩ বছর পর ১৯৯৮ এর ২৬ নভেম্বর । জম্মু তাওয়াই-শিয়ালদহ এক্সপ্রেস পাঞ্জাবের খান্নায় ফ্রন্টিয়ার গোল্ডেন টেম্পল মেলের তিনটি লাইনচ্যুত কোচে ধাক্কা মারে। তাতে ২১২ জন মারা যান।

যদিও এর পরের বছর ১৯৯৯ সালে ২ আগস্ট গাইসাল ট্রেন বিপর্যয়ের স্মৃতি এখনও টাটকা। অবোধ-অসম এক্সপ্রেস এবং ব্রহ্মপুত্র মেলের মধ্যে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল ২৬৮ জনের। আহত হয়েছিলেন ৩৫৯ জন।

এরপর সেপ্টেম্বর ৯, ২০০২ সালে হাওড়া রাজধানী এক্সপ্রেস রফিগঞ্জের ধেভ নদীর উপর একটি সেতুর উপর লাইনচ্যুত হয়। ১৪০ এরও বেশি লোক মারা যান। ঘটনার জন্য সন্ত্রাসবাদীদের নাশকতাকে দায়ী করা হয়।

তারপর ২০১০ সালের ২৮ মে। পশ্চিম মেদিনীপুরের খেমাশুলি এবং সরডিহার মাঝে লাইনচ্যুত হয় মুম্বইগামী জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। লাইনচ্যুত সেই বগিতে সজোরে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ি। বীভৎস এই ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৭০ জনের। এবং সেবছরই ২০১০ সালের ১৯ জুলাই। সাঁইথিয়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা বনাঞ্চল এক্সপ্রেসের পিছনে ধাক্কা মারে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস। এই দুর্ঘটনায় ৬৩ জনের প্রাণ যায়। আহত হন ১৬৫ জন।

এরপর কেটে গিয়েছে ৬ বছর নভেম্বর মাসের ২০ তারিখ, ২০১৬ সালে ইনদৌর-রাজেন্দ্র নগর এক্সপ্রেসের ১৪ টি বগি কানপুর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে পুখরায়নে লাইনচ্যুত হয়ে মারা যান প্রায় ১৫২ জন। আহত হন ২৬০ জন।