মেঝে খুঁড়তেই মিলল ১৩৫’বছর আগের বোতলবন্দি চিঠি! জানুন, কি লেখা ছিল সেই চিঠিতে?

কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গের এক বাড়ির মেঝে কাটার সময় নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন মিস্ত্রি পিটার অ্যালান। কারণ, গর্ত কাটার সময় তিনি এমন একটি বোতল খুঁজে পান; যে বোতলে বন্দি রয়েছে ১৩৫ বছর আগের চিঠি। ভিক্টোরিয়া আমলের ক্যাপসুল আকারের এই বোতল গত সোমবার আবিষ্কার করেছেন এডিনবার্গের ৫০ বছর বয়সী পিটার। হুইস্কির এই বোতলটি মেঝের যেখানে রাখা ছিল, সেই জায়গা কেটে সেটি বের করেন তিনি। এই বোতল খুঁজে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা জানাতে দৌড়ে এডিনবার্গের মর্নিংসাইড এলাকার বাড়ির মালিকের কাছে যান তিনি। ইলিদ স্টিম্পসনকে চিঠিটি পড়ার জন্য বোতল ভেঙে ফেলতে হয়েছিল। বোতলবন্দি চিঠি খুঁজে পাওয়ায় তার দুই সন্তান বেশ উত্তেজিত ছিল বলে জানান তিনি।

অ্যালান বিবিসিকে বলেছেন, একেবারে বোতল যে স্থানে রাখা ছিল, ঠিক সেই জায়গায় কাটতে পারাটা সৌভাগ্যের। যা তিনি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, রুমটি ১০ ফুট বাই ১৫ ফুটের। আর আমি বোতলটি সেখানে ছিল না জেনেই কেবল এর চারপাশে কেটেছি। আমি এটি পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না।আমি নিচের নারীর কাছে গিয়ে বললাম, দেখুন আপনার মেঝেতে কী পেয়েছি।

ডব্লিউএফ উইটম্যান প্লাম্বিং নামের একটি মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক অ্যালান। তিনি বলেন, বাড়িটি যখন প্রথম নির্মাণ করা হয়েছিল, সেই সময়ের গৃহকর্মীর একটি কক্ষের মেঝে থেকে এটি আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে ওই বাড়িতে দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন ইলিদ স্টিম্পসন ও তার জেনারেল প্রাকটিশনার স্বামী। বোতল থেকে চিঠিটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টার আগে আট এবং ১০ বছর বয়সী দুই সন্তান স্কুল থেকে বাড়ি না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন ইলিদ।

বিবিসিকে ইলিদ বলেন, আমি যখন বললাম যে তাদের জন্য চমৎকার একটি বিষয় রয়েছে। তখন তারা আমাকে বলল, এটি কি চায়ের সাথে হট ডগ? শুধু তাই নয়, তারা আরও নানা ধরনের অনুমান করতে লাগল। পরে আমি তাদের বলেছিলাম যে, আমাদের বাড়িতে একটি বোতলবন্দি বার্তা পাওয়া গেছে। তারা সত্যিই উত্তেজিত ছিল এবং ভেবেছিল এটি সম্ভবত কোনও ধনের খোঁজ হবে। তারা প্লাস দিয়ে বোতল থেকে চিঠিটি বের করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু এতে চিঠিটি হালকা ছিঁড়ে যেতে শুরু করে। যে কারণে তিনি একটি হাতুড়ি দিয়ে বোতলটি ভেঙে ফেলেন। এডিনবার্গের এই বাসিন্দা বলেন, আমরা সবাই চারপাশে ভিড় করছিলাম এবং চিঠিটির দিকে টর্চ জ্বালিয়ে পড়ার চেষ্টা করছিলাম।সেই মুহূর্তটা চরম উত্তেজনাপূর্ণ ছিল! চিঠিতে দুই পুরুষ শ্রমিকের স্বাক্ষর ও তারিখ ছিল। এতে লেখা রয়েছে, জেমস রিচি এবং জন গ্রিভ এই মেঝে স্থাপন করেছেন। কিন্তু তারা হুইস্কি পান করেননি। ৬ অক্টোবর, ১৮৮৭। ‘যদি কেউ কখনও এই বোতলটি খুঁজে পান; তাহলে তিনি ভাবতে পারেন যে, আমাদের ধুলা রাস্তার ধারে উড়ছে।

ইলিদ বলেন, ১৩৫ বছর আগের বোতলটি ভেঙে ফেলার সময় তিনি ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু চিঠিটি পাওয়ার একমাত্র উপায় ছিল বোতল ভেঙে ফেলা। আমি বোতলের সব টুকরো টুপারওয়্যারের টাবে রেখেছি। সোমবার এই বোতলবন্দি চিঠি খুঁজে পাওয়ার পর পারিবারিক এক বন্ধু ১৮৮১ সালের আদমশুমারি দেখেন। এডিনবার্গের নিউইংটন এলাকা থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে বসবাসকারী কিছু পুরুষের নাম খুঁজে পেয়েছেন তিনি। স্কটল্যান্ডের ন্যাশনাল লাইব্রেরির একজন কিউরেটর ওই পরিবারটিকে চিঠিটি অ্যাসিড-মুক্ত পকেটে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। ইলিদ বলেন, আমি কিছু পকেট অর্ডার করেছি। শেষ পর্যন্ত আমরা বোতলের একটি টুকরো— যেমন ওপরের অংশ দিয়ে চিঠিটির ফ্রেম করব। কারণ এটি বেশ উত্তেজনাপূর্ণ এবং মনোরম এক জিনিস। তিনি বলেন, চিঠিতে যা লেখা রয়েছে, সেই একই লেখার একটি প্রতিলিপি এখন তারা নতুন করে বোতলে ভরে একই জায়গায় রেখে দেবেন। এটি সব সময় সেখানে থাকবে এবং চিরকাল সেখানে রাখতে পারার কথা মনে করাটাই অত্যন্ত আশ্চর্যজনক। এটি শুধু সত্তরের দশকের বা এরকম কিছু নয়। চিঠিটি অনেক পুরোনো, বেশ মনোমুগ্ধকর।