প্রতিবাদের নতুন ভাষা “হোক আলিঙ্গন”

দুদিন আগের ঘটনা,পাতালরেলে চলতি মেট্রোর ভিতরে এক যুগলের আলিঙ্গনকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতে দমদম মেট্রো স্টেশনে উত্তেজনা ছড়ায়।একদল মেট্রোযাত্রী ‘নীতি পুলিস’-এর হাতে যুগলকে চরম হেনস্থা হতে হয়। ট্রেন থেকে ওই যুগলকে টেনে নামিয়ে একদল প্রবীণ নাগরিক বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, ওই যুগলকে তাঁরা কটূক্তিও করেন।এই ঘটনার কথা সামনে আসতেই নিন্দার ঝড় ওঠে ফেসবুকে। স্পষ্টত, দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়া।এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা, যাদের প্রতিবাদের মুখ হিসাবে চেনে শহর কলকাতা, তারা সোমবার রাতে দমদম মেট্রো স্টেশনের এই ঘটনাকে ঘিরে পথে নামলেন। হোক কলরব, হোক চুম্বনের পর, তাদের প্রতিবাদের ভাষা একটাই “হোক আলিঙ্গন”… টালিগঞ্জ থেকে দমদম বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনে নিজেদের প্রিয়জনকে আলিঙ্গন করেই তাঁরা এই ‘অমানবিক’ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে চান বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের বাইরে এদিন প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদে সামিল হন একদল যুবক যুবতী। শুধু প্রতিবাদই নয়, ভালোবাসার বার্তা দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য বলে দাবি প্রতিবাদীদের।একদলের স্পষ্ট বক্তব্য, আলিঙ্গন করা কোনও অশালীনতা নয়। তা ওই তরুণ-তরুণীর ব্যক্তিগত বিষয়। মেট্রো যাত্রীদের নীতি পুলিস হওয়ার অধিকার কে দিয়েছে, সে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। তোপ দেগেছেন, রাস্তায় কোনও মেয়ে বা মহিলাকে নিগৃহীত হতে দেখলে এই ‘নীতি পুলিস’রা কেউ এগিয়ে আসেন না, কিন্তু আলিঙ্গন করতে দেখলে এদের ক্ষতিকর বলে মনে হয়। তাঁদের সাফ বক্তব্য, মারপিট-হিংসা কি আদৌ সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ? আলিঙ্গন কারও ক্ষতি করছে না। তাই প্রকাশ্যে আলিঙ্গন কখনও বেআইনি হতে পারে না।

“প্রকাশ্যে আলিঙ্গন বা চুম্বন বেআইনি নয়”- বলে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। এই ঘটনায় তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন লেখিকা তসলিমা নাসারিনও। টুইটারে তাঁর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি।
এদিকে এই ঘটনায় প্রথমে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ ওই যুগলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে ফেসবুকে বিবৃতি দিলেও, পরে তা প্রত্যাহার করে নতুন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ঘটনাটির তদন্ত করছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।