গতিকে হারাল ট্যাকটিকাল ফুটবল : হ্যাটট্রিক রিয়ালের

রিয়াল মাদ্রিদ – ৩ (বেনজেমা, বেল – ২)

লিভারপুল – ১ (মানে)

এমন একপেশে ফাইনাল হয়ত কেউ আশাও করেননি। যুদ্ধের সময় যদি স্বয়ং রাজা যদি আহত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেন তাহলে সৈন্যদের মনোবল তো হারাবেই। যাকে ঘিরে লিভারপুল স্বপ্ন দেখেছিল ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের, সেই মহম্মদ সালাহ কাঁধের চোটের জন্য চোখের জলে বিদায় নিলেন কিয়েভের অলিম্পিক স্টেডিয়াম থেকে। যার ফলস্বরুপ পরপর ৩বার এবং সর্বমোট ১৩ বার ইউরোপ সেরা হয় লস ব্ল্যানকোস। বার্সিলোনা ও লিভারপুল যতবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে ততবার রোনাল্ডো স্বয়ং জিতেছে তার কেরিয়ারে, মোট ৫ বার। হতাশ লিভারপুল সমর্থকরা, হতাশ ফুটবলপ্রেমিরা। এমন ফাইনাল তো তারা আশা করেননি।

লড়াই ছিল সালাহ-মানে-ফিরমিনোর গতি বনাম রিয়ালের প্রতি আক্রমণ, ক্লপের প্রেসিং ফুটবল বনাম জিদানের ট্যাকটিকাল ফুটবল। খেলার শুরু থেকেই লিভারপুল চাপ তৈরি করছিল রিয়ালের উপর। বল পজেসনেও তারা এগিয়ে ছিল। তরুণ উইং ব্যাক আলেকজান্ডার-আর্নোল্ড দারুণ কিছু বল বাড়ান ফিরমিনোদের জন্য, কিন্তু রিয়ালের রক্ষণ সদা সতর্ক ছিল। ২৩ মিনিটে আলেকজান্ডার-আর্নোল্ডের শট বাঁচান কেলর নাভাস। কিন্তু ৩০ মিনিটে অঘটন ঘটে লিভারপুলের জন্য। সের্জিও র‍্যামোসের ট্যাকলে কাঁধে চোট পান মহম্মদ সালাহ। প্রচন্ড চোটে ও কান্নায় তিনি মাঠ ছাড়েন, তার জায়গায় আসেন লালানা। লিভারপুলের সমস্ত পরিকল্পনা ঘেটে যায়। যা স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছিল কোচ জুরগেন ক্লপের হতাশ মুখ দেখে। তবে রিয়ালের চিন্তা বাড়ে কিছুক্ষণ বাদে। উইং ব্যাক কার্ভাজালও চোটের জন্য মাঠ ছাড়েন কান্নায়, তার জায়গায় আসেন নাচো। তবে জিদানকে বেশি চিন্তিত মনে হয়নি, কারণ তিনি জানেন তার রিজার্ভ তৈরি যেকোনো পরিস্থিতির জন্য। কিন্তু প্রথমার্ধে সেরকম কোনও গোলের সুযোগ তৈরি হয়নি। রোনাল্ডো তার বিধ্বংসী ফর্মের ধারেকাছেও ছিলেন না আজ, বেনজেমাও সেরকম সুযোগ তৈরি করতে পারছিলেন না। এভাবেই প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য অবস্থায়।

দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় আসল খেলা। ৪৮ মিনিটে ইস্কোর শট বারে লাগে। তবে ৫১ মিনিটে রিয়াল এগিয়ে যায়, যার পুরো কৃতিত্ব যায় লিভারপুল গোলকিপার ক্যারিয়াসের উপর। লরিয়াস ক্যারিয়াস বলটি ধরে ছুঁড়ে মারতে গিয়ে বেনজেমার গায়ে ছুঁড়ে মারেন এবং বল গিয়ে জালে ঢোকে। এমন ভুলের কোনও ক্ষমা হয় না, যদি প্রতিপক্ষের নাম রিয়াল মাদ্রিদ হয়। অবশ্য কিছুক্ষণ বাদেই সমতা ফেরায় লিভারপুল। ফিরমিনোর ক্রসে লভরেন হেড করে পাঠায় মানের উদ্দেশ্যে, সেখান থেকে মানে গোল করতে ভুলল করেননি। যেই মনে হচ্ছিল ম্যাচ জমজমাট হবে তখনই ম্যাজিকের উত্থান। ইস্কোর জায়গায় আসা ইন ফর্ম গ্যারেথ বেলের দুর্দান্ত অ্যাক্রোব্যাটিক ভলিতে এগিয়ে যায় রিয়েল। এই গোলল হয়ত জিদানের ২০০২ সালের ফাইনালের গোলকেও হার মানাতে পারে। এরপর আর হয়ত লিভারপুলের ক্ষেত্রে ফিরে আসা সম্ভব ছিল না। ৭০ মিনিটে মানের গড়ানো শট পোস্টে লাগে। ৮১ মিনিটে বেলের শট দারুণভাবে বাঁচান ক্যারিয়াস। কিন্তু ফের ক্যারিয়াসের ভুলে গোল করল মাদ্রিদ। বেলের দুরপাল্লার শট ধরতে না পেরে নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দেন লিভারপুলের এই গোলকিপার। আর এভাবেই এবছরেরও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে নিল রিয়াল মাদ্রিদ।

২০১৬ সালের ইউরো ফাইনাল এবং এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের গল্প প্রায় একই ছিল। তফাত শুধু গোলকিপারে। সেদিনে রুই প্যাট্রিসিও একক দক্ষতায় পর্তুগালকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন, অপরদিকে লরিয়াস ক্যারিয়াস একক দক্ষতায় লিভারপুলের স্বপ্নভঙ্গ করেন।