মহাকাব্যিক ম্যাচে রিয়ালের প্রত্যাবর্তন, ট্র‍্যাজিক হিরো হয়ে রইল বায়ার্ন

রিয়াল মাদ্রিদ – ২ ( বেঞ্জিমা – ২)

বায়ার্ন মিউনিখ – ২ ( কিমিচ, হামেস রডরিগেজ)

রিয়াল মাদ্রিদ জয়ী ৪-৩ অ্যাগ্রিগেটে

বায়ার্ন কোচ জাপ হেইঙ্কস ম্যাচের আগে বলেছিলেন যে প্যাশনের মাধ্যমে ফুটবলে পাহাড় সরানোও সম্ভব। গত বছর পিএসজি এর বিরুদ্ধে বার্সিলোনার দুরন্ত কামব্যাক হোক, বা এই বছরই বার্সিলোনার বিরুদ্ধে রোমার অবিশ্বাস্য ফিরে আসা হোক, ফুটবল যে শেষ বাঁশি বাজা অবধি অনিশ্চিত, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। সান্তিয়াগো বার্নাবিউতে রিয়ালের এই মরশুমের খারাপ পারফর্মেন্স মাথায় ছিল হেইঙ্কসের, আর ১ গোল পিছিয়ে থাকা অবস্থায় তিনি আশায় ছিলেন বার্নাবিউতে কামব্যাক করতে পারবেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াল জিদানের চ্যাম্পিয়ন লাক। আজও কোচ হিসেবে জিদান কখনও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে যাননি, সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রইল স্প্যানিশ রাজধানীতে।

যদিও খেলার আগে দলগঠনে স্ট্র‍্যাটেজিতে বড়সড় ফাটকা খেলেছেন জিদান। চোটগ্রস্থ কার্ভাজালের পরিবর্তে রাইট ব্যাক হিসেবে মাঠে নামেন উইঙ্গার হিসেবে খেলতে অভ্যস্ত লুকাস ভাসকুয়েজ। তিনি এবং মডরিচ ডান দিকের অঞ্চলটি সেরকম ডিফেন্ড করতে পারছিলেন না, আর অধিকাংশ আক্রমণ বায়ার্ন বারবার ঐ ডানদিক থেকেই করেছে। আলাবা ও রিবেরি বারবার ডান দিক থেকে রিয়েলের বক্সে ঢুকে যাচ্ছিল। শুরু থেকে আক্রমণাত্মক খেলতে খেলতে প্রথম গোল পেয়ে যায় বায়ার্ন। সের্জিও র‍্যামোস বল ক্লিয়ার করতে না পারলে টোলিসোর গায়ে লেগে বল কিমিচের কাছে এলে এই ডিফেন্ডার গোল করতে কোনও ভুল করেননি। অ্যাগ্রিগেটে বায়ার্ন সমতা ফিরিয়ে আনলেও দরকার ছিল আরও একটি অ্যাওয়ে গোলের। কিন্তু রিয়াল ম্যাচে সমতা ফেরায় ১১ মিনিটে। কোভাসিচ মার্সেলোকে পাস দিলে মার্সেলো দারুণ একটি ক্রস বাড়ান বক্সে, আর বেঞ্জিমা হেডে গোল করতে কোনও ভুল করেননি। এরপর বেশিরভাগ সময় বায়ার্ন আক্রমণ করে। মাদ্রিদ মাঝেমধ্যে আক্রমণ করলেও বায়ার্ন তা প্রতিহত করে দিচ্ছে। ৩৪ মিনিটে হামেস প্রায় ফাঁকায় বল পেলে ভলিতে গোলের বাইরে মারেন। এরপর দুইদলই নিজেদের রক্ষণ গুছিয়ে নিয়ে খেলতে থাকে। আর এইভাবে প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-১ অবস্থায়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বায়ার্ন মিউনিখকে ঝটকা দেয় রিয়াল মাদ্রিদ। সৌজন্যে বায়ার্নের গোলকিপার উলরেইচ। টোলিসোর ব্যাক পাস উলরেইচ রিসিভ করতে করতে ভুল করেন, আর সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করলেন বেঞ্জিমা। এরপর শুরু হয় দ্য নাভাস শো। রিয়ালের এই গোলকিপার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বহুবার দলকে বাঁচিয়েছেন, এবারেও তার কোনও খামতি হয়নি। ৫১ মিনিটে আলাবার শট দারুণ সেভ করেন নাভাস। ৬০ মিনিটে হামেলসের শট বাঁচান নাভাস। তবে এত আক্রমণে রিয়ালের রক্ষণ ভেঙ্গে পড়ে ৬৩ মিনিটে। সুলের ক্রস পেয়ে হামেসের প্রথম শট প্রতিহত হয়, কিন্তু দ্বিতীয় সুযোগে গোল করতে ভুল করেননি রিয়ালের এই প্রাক্তনী। সমতা ফেরায় বায়ার্ন। এরপর ৭৪ মিনিটে ফের নাভাস বাঁচান মাদ্রিদকে, টোলিসো দুরন্ত শট প্রতিহত করেন নাভাস। এভাবে সময় চলে যাচ্ছে, বায়ার্নের দরকার একটি মাত্র গোল। দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ে একের পর এক সুযোগ পায় বায়ার্ন। হামেলস হেড পেলেও বাইরে মারেন, আর একদম শেষ মুহুর্তে বাইরে মেরে দেন মুলার। মুলারের শট বাইরে গেলে রেফারি শেষ বাঁশি বাজিয়ে খেলার পরিসমাপ্তি ঘটান।

কিয়েভে প্রতিপক্ষ কে, লিভারপুল না রোমা? এখনও এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। সুযোগ রয়েছে হ্যাটট্রিকের, মাদ্রিদ কি সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারবে? দেখা যাবে ফাইনালে।