বিশ্বকাপারে মানরক্ষা ইস্টবেঙ্গলের, সবুজ-মেরুনের ভিলেন রক্ষণ

এই ফলের কারণে লিগ তালিকায় মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল একই পয়েন্ট এবং একই গোলপার্থক্যে রয়ে গেল, শুধুমাত্র বেশি গোল করার ফলে মোহনবাগান লিগ তালিকার শীর্ষে রয়ে গেল।

মোহনবাগান – ২ (পিন্টু, হেনরি)

ইস্টবেঙ্গল – ২ (আকোস্টা, লালডানমাওয়াইয়া)

মাঠে উপস্থিত থাকা প্রায় ৬৬ হাজার দর্শকরা এসেছিলেন তাদের প্রিয় দলের জয় দেখতে, কিন্তু গোটা ৯০ মিনিটে কি তাদের সেই চেনা দলকে কি তারা পেল? ইস্টবেঙ্গলের সোনালী মাঝমাঠ হোক বা মোহনবাগানের দুর্ধর্ষ আক্রমণ, কেউই সেরকম দাগ কাটতে পারল না। মাঠে উপস্থিত পিকে ব্যানার্জিও হয়ত ভাবতে পারেন তিনি কোনও এক দলের হয়ে সাইডলাইনে থাকলে হয়ত রেজাল্ট অন্যরকম হত।

শুরুর দিকে কিন্তু এমন রেজাল্ট প্রায় কেউই আশা করেননি। মোহনবাগানের আক্রমণে জর্জরিত হয়ে পড়েছিল ইস্টবেঙ্গল দল। কিন্তু লাল-হলুদ শিবিরে সদ্য বিশ্বকাপ খেলে আসা জনি আকোস্টার মাঠে উপস্থিতিতে ইস্টবেঙ্গল যেন তেতে উঠে ম্যাচে ফিরে আসে, টিডি সুভাষ ভৌমিক যেন শুধুমাত্র দর্শক ভূমিকায় ছিলেন।

শুরু থেকেই মোহনবাগান আক্রমণ শাঁনিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণে। কিন্তু আকোস্টার উপস্থিতিতে যেন সেরকম বিপদজনক হয়ে উঠতে পারেনি তারা। হেনরি কিসেকা এবং ডিপান্ডা ডিকাকে সামনে রেখে ইস্টবেঙ্গলের কড়া রক্ষণকে ভেঙ্গে শুরুর দিকে গোল পেতে চেয়েছিলেন কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। ২০ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় মোহনবাগান, অরিজিত বাগুইয়ের ক্রস থেকে পিন্টু মাহাতো চকিত শটে ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক রক্ষিত ডাগারকে পরাস্ত করেন। এরপর ৩০ মিনিটে দুগোলে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। ডানদিক থেকে বল পেয়ে বক্সের মধ্যে দারুন শটে গোল করে বেরিয়ে যান হেনরি কিসেকা। দুগোলে পিছিয়ে পড়ার পর অতি বড় ইস্টবেঙ্গল সমর্থকও ভাবতে পারেনি তারা ম্যাচে ফিরে আসবে। কিন্তু প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে তারা গোল করে। আল আমনার কর্নার থেকে আকোস্টা হেড করলে শিলটন পাল বলটিকে ধরতে পারেননি, ফিরতি বলটি আকোস্টার কাছে এলে তিনি অনায়াসে বলটিকে গোলে রাখে। এই গোলটি করে ইস্টবেঙ্গল প্রথমার্ধের জঘন্য ফুটবলের কিছুটা শাপমুক্তি ঘটিয়েছে।

দ্বিতীয়ার্ধে যেন দুটি দল নিজেদের আমূল বদলে ফেলেছে। ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ যেমন উন্নত হয়েছে, মোহনবাগান যেন আক্রমণ করতে ভুলেই গেছে। একের পর এক আক্রমণ শানায় ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু ডিফেন্সে একা কিংসলে কুম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বলে হয়ত গোল করতে পারছিল না ইস্টবেঙ্গল। লালরিনডিকা রালতের আগমণ থেকেই ইস্টবেঙ্গল যেন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। ৬২ মিনিটে সমতায় ফিরে আসে ইস্টবেঙ্গল। কর্নার থেকে শিলটন ফিস্ট করলে বল আসে লালডানমাওয়াইয়া রালতের কাছে, তিনি সেই বলটিকে ভাল নিয়ন্ত্রণে রেখে জালে জড়িয়ে দেন। দুর্দান্ত ভাবে কামব্যাক করে ইস্টবেঙ্গল, কিন্তু সমতায় ফিরে আসার পর ইস্টবেঙ্গল তাদের গতিকে ধীরে ধীরে কমাতে থাকে। অন্যদিকে মোহনবাগান মাঝেমধ্যে আক্রমণে গেলেও গোলমূখী শট তারা নিতে পারেনি। ডিপান্ডা ডিকা দুবার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে। এই ফলের কারণে লিগ তালিকায় মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল একই পয়েন্ট এবং একই গোলপার্থক্যে রয়ে গেল, শুধুমাত্র বেশি গোল করার ফলে মোহনবাগান লিগ তালিকার শীর্ষে রয়ে গেল।

এই ম্যাচের আকর্ষণ যদি বিশ্বকাপারের পাস মার্কওয়ালা পারফর্মেন্স হয়, তাহলে আরও একটি বিষয় বলা যেতে পারে তা হল ডার্বি কেরিয়ারে মেহতাব হোসেনের করুণ বিদায়। ৬২ মিনিটের মাথায় শিলটন ডি সিলভার জায়গায় আসেন মেহতাব হোসেন। পুরোনো দলের বিরুদ্ধে ভাল খেলার প্রতিজ্ঞায় ছিলেন তিনি, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি চোট পেয়ে বেরিয়ে যান। তিনি আগে জানিয়েছিলেন যে এবারের কলকাতা ফুটবল লিগ খেলে তিনি বিদায় জানাবেন। তাই বলাই যায়, ডার্বি জীবনে তার শেষ খেলা বিমর্ষেই কাটল।