গতি ও মাধুর্যে লিভারপুলের কাছে পরাস্ত রোমা

লিভারপুল – ৫ ( সালাহ – ২, মানে, ফিরমিনো – ২)

রোমা – ২ (জেকো, পেরোত্তি – পেনাল্টি)

দুই আন্ডারডগ, নিজেদের দেশের লিগে কার্যত চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াই থেকে বেরিয়ে যাওয়া দুই দল, যাদের কেউ চ্যাম্পিয়নস লিগে ধর্তব্যের মধ্যেই রাখেনি, সেই দুই দলই খেলে দিল সম্ভবত এবছরের চ্যাম্পিয়নস লিগের সবথেকে আক্রমণাত্মক ম্যাচ। লিভারপুল ও রোমা – দুই দলই লড়েছে ইউরোপে নিজেদের অবস্থানকে পোক্ত করার জন্য, ইতিহাস থেকে বেরিয়ে বর্তমানে ফিরে আসতে চেয়েছিল তারা। আর তাই ফুটবলপ্রেমীদের এমন দুরন্ত ফুটবল উপহার দিল দুই দল।

এনফিল্ডে শুরু থেকে মনে হচ্ছিল না এটা লিভারপুলের হোম ম্যাচ। রোমার ক্রমাগত আক্রমণ লিভারপুলের অপরিণত রক্ষণকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছিল। নায়ানগোলান সমৃদ্ধ মাঝমাঠ রোমাকে বল পজেশনে যথেষ্ট এগিয়ে রেখেছিল। জেকোর দিকে বল পাঠিয়ে গোলের সুযোগ তৈরি করছিল তারা। ১৯ মিনিটে কোলারভের গোলার মতো শট লিভারপুল গোলকিপার ক্যারিয়াস কোনওরকমে বিপদমুক্ত করেন। এভাবে প্রায় ২৫ মিনিট রোমা দুরন্ত খেলে। কিন্তু তারপর লিভারপুল খেলাটা ধরে নেয়। মহম্মদ সালাহ তার অসাধারণ গতির মাধ্যমে জুয়ান জেসাস, মানোলাসের রক্ষণকে ভেদ করে এগিয়ে চলেন। পরপর ২৯ ও ৩০ মিনিটে সাদিও মানে গোল করার সুযোগ পেলেও বাইরে মারেন। উইনালডাম ও সালাহ অসাধারণ ফুটবল খেলতে শুরু করেন, গোটা এনফিল্ড উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। লিভারপুল কোচ জুরগেন ক্লপ আরও উজ্জীবিত করে দর্শক ও খেলোয়াড়দের। ৩১ মিনিটে সালাহ এর কার্ল শট রোমার গোলকিপার আলিসন বাঁচান। কিন্তু রোমার শেষরক্ষা হয়নি। এবছর প্রিমিয়ার লিগের সেরা প্লেয়ায় মহম্মদ সালাহ ৩৫ মিনিটে দুর্ধর্ষ একটা শটে টপ কর্নারে গোল করে লিভারপুলকে এগিয়ে দেন। গোল করার পরেও লিভারপুলের আক্রমণ অব্যাহত থাকে। ৩৭ মিনিটে সালাহ এর কর্নার লভরেন ফাঁকায় হেড করলে সেটা বারে লাগে। আর প্রথমার্ধের শেষ দিকে ফের মহম্মদ সালা গোল করেন পুরোনো ক্লাবের বিরুদ্ধে। দুরন্ত গতিতে গোলের কাছে গিয়ে আগুয়ান আলিসনের ওপর দিয়ে বল তুলে গোল করেন এই মিশরীয়। পুরোনো দলের বিরুদ্ধে গোল করার পরেও তিনি কোনও সেলিব্রেশন করেননি। যা অবশ্যই সম্মানের লক্ষণ। এভাবেই প্রথমার্ধ শেষ হয় লিভারপুল এগিয়ে থাকা অবস্থায়।

দ্বিতীয়ার্ধে ফের লিভারপুল শো শুরু। সাদিও মানে ও রবার্টো ফিরমিনোর সাথে মহম্মদ সালাহ ক্রমাগত চাপ বাড়ায় রোমার ডিপ ডিফেন্সে। ৫৬ মিনিটে কার্যত ম্যাচ জয়ের গোল করে দেয় লিভারপুল। ফের নায়ক সালাহ। তিনি বক্সের ভেতর দারুণ পাস বাড়ালে মানে গোল করতে এবারে কোনও ভুল করেননি। এরপর কার্যত মরার উপর খাঁড়ার ঘা মারে লিভারপুল। ৬১ মিনিটে সালাহ এর লো ক্রসে ফিরমিনো গোল করেন। আর ৬৮ মিনিটে মিলনারের কর্নার থেকে হেডে গোল করে নিজের দ্বিতীয় ও দলের পঞ্চম গোল করেন ফিরমিনো। রোমার সমর্থকরাও লিভারপুলের এমন দুর্দান্ত খেলার অভিবাদন জানিয়েছে। ৫ গোল করার পর লিভারপুল নিজেদের গতি কমিয়ে আনে, যার ভরপুর ফায়দা তোলে রোমা। ৮১ মিনিটে জেকো ও ৮৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে পেরোত্তি গোল করে রোমার হয়ে দামি দুটি অ্যাওয়ে গোল তুলে আনে তারা।

এবার দেখা যাবে রোমে এই দুই গোল রোমার জন্য ফের এক দুরন্ত কামব্যাকের মজুত হয়ে ওঠে কিনা। তবে সেমিফাইনাল বলতে যা বোঝায় তা দেখিয়ে দিল তথাকথিত দুই আন্ডারডগ।