ডার্বিতে রক্তের ছাপ

আরো একবার রক্তাক্ত হল বাঙালির বড় ম্যাচ, সৌজন্যে ভিআইপি গ্যালারী!

109

বাঙালির বড় ম্যাচ হয়ে গেছে প্রায় ২০ ঘন্টা হয়ে গেলো। মরশুমের প্রথম ডার্বি অমিমাংসিত শেষ হওয়ার পর আফসোস করছে দুই দলেরই সমর্থক। সবার মুখেই এক কথা,’ইসস্ ম্যাচটা আমরা জিততেও পারতাম!’

তবে বড়ম্যাচ মানেই দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে গণ্ডগোল! দুই দলের আবেগতারিত সমর্থকেরা অনেকসময় জড়িয়ে পড়েন ঝামেলায়, ঝামেলা গড়ায় হাতাহাতি পর্যন্ত। এর মাঝে বলি হতে হয় অনেক নিরীহ সমর্থকদের, যারা হয়ত জানতেও পারেননা তাদের দোষটা কি?

তবে এতোদিন ঝামেলা ছিল মাঠের বাইরেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতার বলয় টপকে গ্যালারীতেই ঘটে গেলো লজ্জাজনক ঘটনা। তাও আবার ভিআইপি গ্যালারীতে।

ঘটনার সূত্রপাত মোহনবাগানের প্রথম গোলের পরেই।
শ্যামনগর থেকে আগত মোহনবাগান সমর্থক অর্নব চন্দ এবং তার ৯ বছরের ছেলে অরিঞ্জয় এই গোলের পরেই স্বাভাবিক ভাবেই আনন্দে লাফিয়ে ওঠে। কিন্তু এরপরেই তারদিকে ধেয়ে আসে কিল-চড়-ঘুষি।

প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, ভিআইপি গ্যালারীতে দুই দলের সমর্থকদের মাঝে ছিলনা কোনো ব্যারিকেড। ফলস্বরূপ সবুজ-মেরুন এবং লাল-হলুদ দুই দলেরই সমর্থক বসেন পাশাপাশি এক জায়গায়।

কিন্তু প্রিয় দলের গোল করার আনন্দে লাফিয়ে উঠলে তার বদলে যে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফিরতে হবে, তা তিনি জীবনেও ভাবেননি।

অর্নব বাবুকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গোল হওয়ার পর আমি এবং আমার ছেলে আনন্দে লাফিয়ে উঠি। এরপর কিছু ইস্টবেঙ্গল সমর্থক আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার উপর চড়াও হন। এবং তারা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় আমি প্রতিরোধ করতেও পারিনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ওরা মেরে আমার জার্সি ছিঁড়ে দেয়, মুখে ঘুষি মারলে আমার মুখ ফেটে রক্ত বেরোতে থাকে।’

অর্নব বাবু জানান তাকে এভাবে হঠাৎ মার খেতে দেখে তার ছেলে ভয় পেয়ে যায় এবং আতংকিত হয়ে কাঁদতে থাকে। কিন্তু তার ছেলের কান্না দেখেও মার থামায়নি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা।

ছোট অরিঞ্জয় ডার্বি দেখতে যাওয়ার আগে।

তিনি আরো জানান ‘ ১৯৯৫ থেকে মাঠে যাচ্ছি, ছেলেকে প্রথমবার মাঠে নিয়ে এসেছিলাম। এতো বছর খেলা দেখতে এসেছি কোনোদিন এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়নি। আমার ছেলে ভয় আর মাঠে আসতে চাইছেনা। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, যারা আমায় মারলেন তারা কেউই কমবয়সী অথবা মধ্যবয়স্ক নয়, যারা এই ঘটনায় সামিল ছিলেন তার সকলেই বয়স্ক।’

কম বয়সী যুবক অনেক সময়েই রাগের মাথায় ভুলকাজ করে বসে, কিন্তু অভিজ্ঞ বয়স্ক মানুষরা কিভাবে এই ঘটনা ঘটালেন তা অর্নব বাবু এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছেননা।

প্রথম অর্ধের খেলা শেষ হওয়ার পরেই ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে যান অর্নব বাবু। তার প্রিয় সবুজ-মেরুন জার্সি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা ছিঁড়ে দেওয়ায় তাকে নতুন একটি জামা কিনে, সেটা পড়ে বাড়ি ফিরতে হয়।

অর্নব বাবুর বাড়ির লোক সবাই আতংকিত। অর্নব বাবুকে এতো বছর খেলা দেখতে যেতে দেখেছেন কিন্তু গতকাল তার জন্যে এতো বড় বিপদ অপেক্ষা করে আছে তা হয়তো তার বাড়ির লোক স্বপ্নেও ভাবেননি।

গ্যালারীর পরিবেশ যেখানে পরিবর্তন হচ্ছে, মুহুর্মুহু গালিগালাজের বদলে হচ্ছে ভাইকিং ক্ল্যাপ, টিফো, ফ্ল্যাশ লাইট কিংবা মেক্সিকান ওয়েভ, সেখানে ভিআইপি গ্যালারীর মতো তথাকথিত ভদ্রস্ত জায়গায় এমন ঘটনা নিন্দনীয় এবং লজ্জাজনক।

মাঠে মানুষ যায় নিজের সময়,কষ্টার্জিত টাকা খরচ করে শুধুমাত্র নিজের প্রিয় দলের খেলা দেখতে। কিন্তু খেলা দেখতে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরলে পরবর্তী প্রজন্ম কি সাহসে মাঠে আসবে? কি শিখবে তাড়া?

মান্না দে বলেছিলেন,
‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল।’ সেই ফুটবলকেই তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে যাতে কেড়ে না নেওয়া হয় তা দেখতে হবে প্রবীণদেরই।