রাজনীতির শিকার? বোর্ড মিটিংয়ে সৌরভকে ‘পিছন থেকে ছুরি’ মেরেছিলেন ইনিই!

ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের মসনদে হয়ে গেল ব্যাপক রদবদল। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক হল রজার বিনির। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন বিজেপিতে যোগ না দেওয়ার কারনে মূল্য চোকাতে হল দাদাকে? ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় শোনা গিয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যোগ দিতে পারেন বিজেপিতে। পাশাপাশি এও শোনা যায় যে বিজেপির প্রজেক্টটেড মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও বেঁছে নেওয়া হয়েছে তাঁকে। কিন্তু সব জল্পনা ভুল প্রমাণ করে সৌরভ রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন ও থাকবেন বলে জানিয়েছিলেন।

কিন্তু সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সৌরভের সভাপতি পদ হারানোর পেছনে এখনও পর্যন্ত কোন রাজনীতির  ভূমিকা খুঁজে পাওয়া যায়নি! তবে, বোর্ড মিটিংয়ে সৌরভকে নাকি পিছন থেকে ছুরি মেরেছেন খোদ বোর্ডের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসন?  গত বৃহস্পতিবার বোর্ডের শীর্ষ স্তরের সব কর্তার মিলে এক বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে ছিলেন সৌরভের পাশাপাশি হাজির ছিলেন বোর্ড সচিব জয় শাহ, ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব শুক্ল, কোষাধক্ষ অরুণ ধুমল ও বোর্ডের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসন। আর সেই বৈঠকে আচমকা ইউ-টার্ন নিয়ে নেয় সমস্ত পরিস্থিতি। যা সৌরভ মোটেও আন্দাজ করতে পারেননি । কারন সুপ্রিমকোর্টের কুলিং অফ নিয়মে শিথিলতার পরে সৌরভ মনে মনে নিশ্চিত ছিলেন যে তিনিই আরও একবার বোর্ডের সভাপতি আসনে বসবেন।

জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবারের বোর্ড মিটিংয়ে সৌরভের বিরূদ্ধে সরব হয়েছিলেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। তিনি সেই মিটিংয়ে সৌরভ গাঙ্গুলীর সভাপতিত্বকে সরাসরি নন-পারফর্মার বলে দেন। চেন্নাই সুপার কিংসের মালিক এন শ্রীনিবাসন বোর্ডের বৈঠকে এসেছিলেন তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে। পাশাপাশি বোর্ডের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী প্রেসিডেন্টও তিনি। এছাড়াও এন শ্রীনিবাসন বিসিসিআইয়ের রাজনীতি সম্পর্কে ভালোরকম ওয়াকিবহাল কারণ একসময় বোর্ড চলত তাঁর অঙ্গুলিলেহনে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে শ্রীনিবাসনই নাকি সৌরভকে সরিয়ে বোর্ডে সভাপতি পদের জন্য রজার বিনির নাম প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবে বোর্ডের বাকি মেম্বাররা মত দেন। এছাড়াও বোর্ড মিটিংয়ে একাধিক ক্ষেত্রে তিনি নেতিবাচক কারণে জন্য শিরোনামে উঠে আসেন। যেমন সৌরভ নিজে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েও বোর্ডের স্পনসর সংস্থার বিরোধী কোম্পানির ব্র্যান্ডে এন্ডোর্সমেন্ট করেছেন। পাশাপাশি দিল্লি ক্যাপিটালস দলের মালিক জেএসডব্লিউ গ্রুপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার পরে স্বার্থ-সংঘাতের ইস্যুতে জড়িয়ে পড়েন। সেই মিটিংয়ে প্রশ্ন ওঠে বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হয়েও কীভাবে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির পক্ষে পরোক্ষ ভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার চালাতে পারেন? ইত্যাদি… ইতাদি…

যদিও তাঁকে নিয়ে এসব বিতর্কের সূচনা, ২০২০ তে আইপিএল টুর্নামেন্ট থেকে শুরু হয়। সেবার প্রশ্ন উঠেছিল করোনার মধ্য তিনি কিভাবে আইপিএল আয়োজন করতে পারেন। তবে বোর্ডে সৌরভ জমানার সবথেকে বিতর্কিত বিষয় ছিল বিরাট কোহলির সঙ্গে সংঘাত। সৌরভ জানিয়েছিলেন তার তরফ থেকে টি২০ নেতৃত্ব না ছাড়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল বিরাট কোহলিকে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে রওনা হওয়ার ঠিক আগেই কোহলি প্রকাশ্যে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বলেন, তাকে একবারের জন্যও নেতৃত্ব না ছাড়ার অনুরোধ করা হয়নি। এই কারণের জন্য বোর্ডের সঙ্গে কোহলির একটি বিদ্বেষ তৈরি হয়। ঋদ্ধিমান সাহাও প্রকাশ্যে সৌরভের বিপক্ষে মুখ খোলেন। সবমিলিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এইসব ঘটনাগুলি বোর্ড মিটিংয়ে ঝড় হয়ে আছড়ে পড়ে সৌরভের বিরুদ্ধে।