চোর-ধর্ষক-খুনিরা ধরা না পরলেও! দুটো খিস্তি দেওয়াতেই ধরা পড়ে গেল রোদ্দুর রায়, নিন্দায় সরব নেটদুনিয়া

মুখ্যমন্ত্রীকে অশালীন মন্তব্যের অভিযোগের জেরে গতকাল মঙ্গলবার গোয়া থেকে গ্রেফতার হন অনির্বান রায় অরফে রোদ্দুর রায়। মূলত, একাধিক থানায় রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পরেই গোয়া থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে লালবাজারের সাইবার ক্রাইম, গুন্ডাদমন শাখা। কেন রোদ্দুর রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে? তা উল্লেখ জানানো হয়েছে, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর এবং বিভিন্ন নেতাদের নামে অশালীন ও কুরুচিকর মন্তব্যে করেছেন। বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা আকাদেমি পুরস্কার পাওয়ার পর বিতর্কিত মন্তব্য করায় তাঁকে নিয়ে প্রবল প্রতিবাদ শুরু হয়। তারপর থেকেই রোদ্দুর রায়ের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। তাঁর মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। গোয়ায় যায় কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ও গুন্ডাদমন শাখার একটি টিম। তারাই গোয়া থেকে রোদ্দুরকে গ্রেফতার করে।

এদিকে রোদ্দুর রায়ের গ্রেফতারি নিয়ে সরব হয়েছে নেটদুনিয়া (#freeroddurroy)। তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে কেউ কেউ জানাচ্ছেন, বাংলার জনগণকেও একটু বুঝতে হবে। সবসময় সবকিছু নিয়ে হইচই করলে চলে না। একটা রাজ্যের পুলিস অন্য রাজ্যে ‘অপরাধী’ ধরবে, তারপর নিজের রাজ্যে অপরাধী ধরবে, এত দাবি করলে চলে? আর তাছাড়া রোদ্দুর রায় তো চালচুরি-ত্রিপলচুরি, গরিবের টাকা মারা বা খুন-ধর্ষণের মতো ছোটখাটো ভুল করেনি। লোকটা সাধারণ নাগরিক হয়ে শাসকদলকে খিস্তি করেছে। এত বড় অন্যায় ছেড়ে ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি নিয়ে শোরগোল করাটা বাংলার মানুষের মানায় না। ঠিকাচে? আবার কেউ লিখেছেন, আনিস খানের খুনীরা ধরা পড়েনি। তুহিনা খাতুনের খুনীরা ধরা পড়েনি। বগটুইয়ের খুনীরা ধরা পড়েনি। হাঁসখালির ধর্ষক ধরা পড়েনি। অথচ দুটো খিস্তি দিয়ে রোদ্দুর রায় ঠিক ধরা পড়ে গেল। এদিকে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য লিখেছেন, রোদ্দুর রায় কে গ্রেপ্তার পুলিশি রাষ্ট্র কায়েমের এক পদক্ষেপ| মুখ্যমন্ত্রি বা প্রধাণমন্ত্রি র সমালোচনা বা চাঁছাছোলা বিশ্লেষণ বা তাঁর অশালীন শব্দ প্রয়োগ পছন্দ না হতে পারে কিন্তু সে কারণে তাঁকে আটক করা টা সংবিধান স্বীকৃত বাক্ স্বাধীনতা বিরোধী| সাহস থাকলে তাঁর মূল বক্তব্যের যুক্তি সংগত বিরোধীতা করুন| গ্রেপ্তার করে ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করা যায় না|

দীপঙ্কর মণ্ডল এক জনৈক নেট নাগরিক লিখেছেন অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারে নি কিন্ত অনির্বাণ রায় রোদ্দুর হতে পেরেছেন। রোদ্দুর রায়-এর বলা বোকাদোচা শুনে যদি আপনার শহুরে ভদ্র সুশীল কানে তালা লাগে অথচ অনুব্রতদের চড়াম চড়ামের মতো ভয়ঙ্কর হিংস্র উচ্চারণে কোন সমস্যা না হয় তাহলে হে মহান ‘বাল নাগরিক’ আপনি হয় ক্ষমতার চামচা নয়তো পাক্কা আবোদা। দুটোই কিন্তু রাষ্ট্রের খুব পছন্দের।
অরণ্যের নতুন প্রবাদগুলি—
কয়লার বখরা নেতারা খায়
জেলে কিন্তু রোদ্দুর রায়….
মন্ত্রীর মেয়ে এসএসসি পায়
জেলে কিন্তু রোদ্দুর রায়….
আনিসের খুনিরা ঘুরে বেড়ায়
জেলে কিন্তু রোদ্দুর রায়…….

অন্যদিকে, ফ্রিডম অফ স্পিচের প্রসঙ্গ টেনে নেটনাগরিক ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত লিখেছেন…

ফ্রিডম অফ স্পিচ এন্ড এক্সপ্রেশনের মধ্যে ফ্রিডম অফ খিস্তি, ফ্রিডম অফ খিল্লি, ফ্রিডম অফ বলদামি, ফ্রিডম অফ হেইমাড়, ফ্রিডম অফ ভাবাবেগে আঘাত ইত্যাদিগুলোও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু হেটস্পিচ কখনো ফ্রি স্পিচের মধ্যে পড়ে না। তাই রোদ্দুর রায়ের বক্তব্যকে “কুরুচিপূর্ণ” মনে হলেও সেটা ফ্রিডম অফ স্পিচ, জনতা সেটার নিন্দে করলে সেটাও ফ্রিডম অফ স্পিচ…… কিন্তু “গুলি করে দেব”/”বোমা মারব”/”ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব”/”ধর্ষণ করবো”/”জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো” ইত্যাদিগুলো ফ্রিস্পিচ নয়, এগুলো হেটস্পিচ। তাই এই সব থ্রেট বা হুমকির ক্ষেত্রে আইনের সাহায্য নেওয়াই যায়। উচিতও।
সোজা ভাষায় আমার যেকোনো ধরনের বক্তব্য রাখার অধিকার আছে, “কুরুচিপূর্ণ” হলেও। তোমার সেটা পছন্দ না করে সমালোচনা করার অধিকার আছে। আবার আমার পাল্টা অধিকার আছে তোমার সমালোচনাকে ধুইয়ে দেবার। কিন্তু আমার যেমন অধিকার নেই তোমার ঘাড় ধরে আমার বক্তব্যকে সমর্থন করানোর তেমনি তোমারও অধিকার নেই আমায় পুলিশের হাতে তুলে দেবার। এটাই বাকস্বাধীনতা। তোমার হাত চালানোর পুর্ণ স্বাধীনতা আছে, কিন্তু সেই পর্যন্ত যতক্ষণ না আমার গায়ে লাগে। এটা ব্যক্তিস্বাধীনতা।
সুতরাং রোদ্দুর রায়কে ছেড়ে দেওয়া হোক। এখানে ব্যক্তি রোদ্দুর রায়ের থেকে অনেক বেশি ইম্পর্ট্যান্ট একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। বিরোধী পক্ষকে পুলিশ হেফাজতে রেখে দিয়ে “স্রেফ আমি বলব” টাই বাকস্বাধীনতা হলে সেটা এতটাই অর্থহীন, যে, তর্কে যাবারও কোনো মানে নেই।