এবারের কার্নিভাল নিয়ে কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে রাজ্য সরকার?

220

২০১৬ সালে বাংলায় প্রথম দুর্গা কার্নিভাল শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত,মুম্বইয়ের গণপতি উত্‍সবের বিসর্জনের মতো কল্লোলিনী কলকাতার সেরা প্রতিমার বিসর্জনের জন্য এই কার্নিভালের ভাবনাচিন্তা মাথায় এনেছিলেন তিনি। প্রথম বছর ২৫টি দুর্গাপ্রতিমা থাকলেও ধীরে ধীরে তা ধারে অনেকটাই বেড়ে চলেছে। অর্থাৎ ২০১৬ সালে সেরা ৩০টি প্রতিমা এই কার্নিভালে অংশ নিয়েছিল। ২০১৭ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬টিতে। আর এবার ৭৫টি পুজো স্থান পাবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু মূল শহর নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার শহরতলি, উত্তর ২৪ পরগনার শহরতলি এবং হাওড়া জেলার সেরা পুজোও স্থান পাবে এই কার্নিভালে। তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তর তার তালিকা তৈরি করে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।

উল্লখ্যে, মুখ্যমন্ত্রী মহালয়ার আগে থেকেই উত্তর থেকে দক্ষিণে পুজো পরিক্রমা করতে বেরিয়ে পড়েন। সেই সময় তাঁর নজরে পড়া পুজো মণ্ডপগুলি দুর্গা কার্নিভালে স্থান পায়। যেখানে ট্রেলারে করে প্রতিমা আনার সঙ্গে সঙ্গে পুজোমণ্ডপও তুলে ধরা হয়। যার আনুষ্ঠানিক নাম প্রতিমা বিসর্জন কার্নিভাল। পুজো শেষ হওয়ার পর কার্নিভাল নিয়ে মানুষের মধ্যে খুবই আগ্রহ থাকে। এবার তা কোনও অংশে কম নয়। এবার কার্নিভাল হবে ২৩ অক্টোবর, মঙ্গলবার। তার আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে ১৫ দিন আগে থেকেই। দুর্গাপুজোর মণ্ডপের মতো বিশাল ম্যারাপ বাঁধা হয়েছে। তৈরি হচ্ছে কাঠ, বাটাম, থার্মোকল, ফাইবার দিয়ে মঞ্চ। এবার কার্নিভালের জন্য রেড রোডের ধারে কাঠের পাটাতন দিয়ে প্যান্ডেল তৈরির কাজ বেশ কয়েকদিন আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রায় ২০ হাজার মানুষ যাতে বসে দেখতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মঞ্চে বসবেন, সেটিকে দেখার মতো করে সাজিয়ে তুলছেন শিল্পীরা। দুর্গা কার্নিভাল বিদেশিদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। এবার টেমস ফেস্টিভ্যালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের চুক্তি হয়েছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র-পর্যটনসচিব অত্রি ভট্টাচার্য ও ক্রীড়া যুবকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা টেমস ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলেন। সেখানকার প্রতিনিধিরাও রাজ্যে আসছেন। এই নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ব্রাজিলের কার্নিভালের মতো কল্লোলিনী কলকাতায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে নিরঞ্জন শোভাযাত্রা। তবে এবার সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতিমা নিয়ে উপস্থিত পুজো কমিটিগুলি দেড় মিনিট করে সময় পাবে। আগে পুজো কমিটি পেত আড়াই থেকে তিন মিনিট। দেড় মিনিটের মধ্যে গানের তালে তালে পুজো কমিটির সদস্য-সদস্যাদের পারফরম্যান্স করতে হবে।
এদিকে, নবান্নের রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, কলকাতায় অবস্থিত কনসালগুলির প্রধানরা রাজ্যকে এমন আগ্রহের বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকেও বিসর্জন উপলক্ষে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার গঙ্গার পাশাপাশি বড় পুকুর, ঝিল ও সরোবরে ফুল, বেলপাতা বা অন্য সামগ্রী যাতে কোনও পুজো কমিটি না ফেলে তার জন্য অফিসার ও কর্মীদের নিযুক্ত করা হচ্ছে। মাইকের মাধ্যমে প্রচারও চালানো হবে। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে আবার ২৪টি ঘাটে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। ঘাটগুলিতে থাকছে লঞ্চ, ডুবুরি। বিসর্জনের কথা মাথায় রেখে রিভার ট্রাফিক পুলিশ নজরদারি করবে। প্রতিটি ঘাটে ক্লোজড সার্কিট টিভি থাকবে। ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমেও সবরকম নাশকতা রোখার চেষ্টা করা হবে। নজরদারিতে থাকবেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনির সদস্যরাও। কলকাতা পুলিশের বক্তব্য, বাড়ি ও বারোয়ারি মিলিয়ে শহরে চার হাজারের কাছাকাছি পুজো হয়। কলকাতা পুরসভা আবার রিভার ট্রাফিক পুলিশের সাহায্যে গঙ্গা দূষণের প্রকোপ ঠেকাতে জালের ব্যবস্থা করার চিন্তাভাবনা করেছে। মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, “পুরসভার প্রায় পঁাচশো কর্মী গঙ্গার ঘাটে মোতায়েন থাকবেন। ৪৫টি গাড়ি ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে।”