ঐতিহ্যের টেস্ট বনাম আইপিএল

১৮ই এপ্রিল ২০০৮, ক্রিকেটের ময়দানে শুরু হয়েছিল বাণিজ্যিকরণের খেলা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএল। ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু ম্যাচে গ্যালারিতে দর্শক ছিল কাণায় কাণায় ভর্তি। বি.সি.সি.আই-এর অভিনব প্রয়াস ২০ ওভারের এই আইপিএল কেমন হবে তার কৌতুহলে বহু ক্রিকেটপ্রেমী মাঠমুখী হয়েছে। প্রথম ম্যাচে ব্যাঙ্গালোরের ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ৭৩ বলে ১৫৮ রানের ঝোড়ো ইনিংস দিয়ে শুরু হয় আইপিএল। মাঠে ডিজে ও চিয়ার গালর্সদের নাচে মেতেছিল দর্শকরাও। কিন্তু প্রশ্ন হল এটা কি আদৌ ক্রিকেট? মাঠে চিয়ার গালর্স, ডিজে বা ম্যাচ শেষে পার্টি এইসব তো ক্রিকেট ঐতিহ্যের মধ্যে পড়ে না। আইপিএল কি আদৌ আমাদের ভালো ক্রিকেট উপহার দিচ্ছে?

ক্রিকেটের ইতিহাস শুরু হয়েছে টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে। সাদা পোশাকে মাঠে নেমে ৫ দিনের টেস্টে নিজের সেরা খেলা খেলতে মরিয়া ছিলেন তখনকার উঠতি ক্রিকেটাররা। প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সুযোগ পাওয়াই তখন একমাত্র লক্ষ্য ছিল তরুণ দের। আইপিএল শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতে এই প্রথম শ্রেণীর টুর্নামেন্ট গুলির গুরুত্ব ক্রমশ কমেছে। বহু উঠতি ক্রিকেটারের কাছে এখন আইপিএল-এ সুযোগ পাওয়াই একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে, প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ গুলিকে তাঁরা তেমন গুরুত্ব দেয় না। আইপিএল-এর জৌলুসে তাঁরা ভুলতে বসেছে টেস্ট ক্রিকেটের গুরুত্ব ও ঐতিহ্য দুটোই। আইপিএল-এ ভালো খেলতে পারলেই শিরোনামে উঠে আসা যাবে ভারত তথা গোটা ক্রিকেট দুনিয়ায়, এমনটাই ধারণা হচ্ছে তাঁদের। আর ঠিক এখানেই আইপিএল-এর কাছে হেরে যাচ্ছে প্রথম শ্রেণীর টুর্নামেন্ট গুলি, হেরে যাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট।

তবে প্রশ্ন উঠতেই পারে আইপিএল খেলে কি কেউ সাফল্য পাচ্ছে না? হ্যাঁ অবশ্যই পাচ্ছে। বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রিকেট লিখিয়ে দেবাশীষ দত্ত বলছেন, “কোনও ক্রিকেটার সোজা ব্যাটে সনাতনী ক্রিকেট খেলা শিখে ঢুকছে। আবার কেউ চটজলদি বেশী টাকা রোজগার করতে চাইছে কম পরিশ্রম করে। যারা ক্রিকেটের ব্যাকরণ মেনে সোজা ব্যাটে খেলতে চায় তারাই সুন্দর ছয় মারতে পারে। সঠিক টেকনিক জানা না থাকলে আইপিএল-এও সফল হওয়া যায় না।” তিনি মনে করেন আইপিএল শুরু হওয়ায় ক্রিকেট খেলার মান উন্নয়ন হয়নি।

টেস্ট ক্রিকেটের ঐতিহ্য কমে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখন মানুষের হাতে সময় কম ফলে সারাদিন ধরে টেস্ট দেখার ধৈর্য্য আর কারোর নেই। আইসিসি চেষ্টা করছে কিছু বিবর্তন নিয়ে আসার, দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচ শুর করার যাতে টেস্ট দেখতে দর্শকরা মাঠে আসে।” তবে টেস্ট ক্রিকেট যে এখন সংকটে তা মেনে নিয়েছেন বহু ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ।