শীর্ষে থেকেও স্বস্তি উধাও সবুজ-মেরুন সমর্থকদের

গতকাল রেনবো ক্লাবের সভাপতি সুখেন মজুমদার আইএফএ এবং এআইএফএফ-কে এই ঘটনা সম্পর্কে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি পাঠান।

168

গত মঙ্গলবার কলকাতা লিগের ম্যাচে পিছিয়ে পরেও ম্যাচ জেতা,মেহতাব হোসেনের মোহনবাগান জার্সিতে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন, শঙ্করলালের সাহসী ৩-৫-২ ছকে দল সাজানো সবকিছুকে পেছনের সারিতে ফেলে ময়দান সরগরম রেইনবো কোচের মেয়ে এবং তার সঙ্গীদের মারধোরের অভিযোগে।

ঘটনার সূত্রপাত প্রথমার্ধে নিউ ব্যারাকপুরের দলটি একগোলে এগিয়ে যাওয়ার পরেই।সদস্য গ্যালারীতে বসে থাকা কোচ তড়িৎ ঘোষের মেয়ে তোর্সা ঘোষ (যিনি মোহনবাগান মাঠের পরিচিত মুখ এবং মোহনবাগানের মহিলা সমর্থকদের ফোরাম ‘লেডি মেরিনার্স’ এর সদস্যা) এবং তার বয়ফ্রেন্ড তথা তার কলেজের অধ্যাপক রিচিক ব্যানার্জ্জী লাফিয়ে ওঠেন। তাদের এই লাফিয়ে ওঠা নিয়ে সদস্য গ্যালারীতে যাতে কোনোরকম ঝামেলা না হয় তার জন্য কিছু সদস্য সমর্থক তাদের অনুরোধ করে যে, তারা যেন গোলপোস্ট এর পিছনে অ্যাওয়ে দলের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে বসেন। কিন্তু রিচিক বাবু এবং তাঁর সঙ্গীরা সেই কথার পাত্তা না দিলে শুরু হয় কথা কাটকাটি যা পরে ধাক্কাধাক্কি পর্যায় চলে যায়। পুলিশ কাছেই থাকায় দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন তারা। তোর্সা সহ তার সাথীদের পুলিশ ব্যারিকেড করে বাকি ম্যাচ দেখানোর ব্যবস্থা করে।

কিন্তু তারা ম্যাচ শেষ হবার আগেই বেড়িয়ে যান এবং দাবী করেন রিচিক বাবুকে মেরে রক্তাক্ত করে দেবার পাশাপাশি রেইনবো অ্যাকাডেমির অনুর্দ্ধ-১৬ দলের ফুটবলার দের ও মারা হয়, তারা গুরুতর আহত।

এরপরেই সোশ্যাল মিডিয়া মোহনবাগান সমর্থকদের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতে ভরে যায়। তারা দাবি করেন এমন কিছু হয়নি! কিছু মোহনবাগান সমর্থক বলেন অসুস্থ খেলোয়াড়দের পাশে দাড়াবেন, তাদের নাম,ঠিকানা জানানো হোক। কিন্তু গত ৪৮ ঘন্টায় বারংবার তোর্সা,তড়িৎ বাবু বা ক্লাব কর্তৃপক্ষের সাথে যোগযোগ করা হলেও তারা আহত ফুটবলারদের নাম ঠিকানা দিতে পারেননি। এমনকি তড়িৎ বাবুর কন্যা সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন যে তার গায়ে কেউ হাত তোলেননি। তোর্সা ঘোষের বারংবার বয়ান পরিবর্তনেও বিরক্ত সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা।

গতকাল রেনবো ক্লাবের সভাপতি সুখেন মজুমদার আইএফএ এবং এআইএফএফ-কে এই ঘটনা সম্পর্কে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি পাঠান।

তিনি সেই চিঠিতে লেখেন রেনবো এফসির খুদে ফুটবলার, সমর্থক, এমনকি মহিলা সমর্থকদের উপর বাগান সমর্থকরা আক্রমণ করে। কিন্তু তড়িৎ বাবুর কন্যা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নিজে লেখেন যে তার গায়ে কেউ হাত তোলেননি। সুতরাং তাদের এই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন!

স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনার পর মোহনবাগান ক্লাব এবং তার সদস্য সমর্থকদের সম্মান নিয়ে টানাটানি পরে যায় , মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত তারা।

তাদের প্রশ্ন,প্রথম দুদিন দাবি করা অনূর্ধ্ব -১৬ ফুটবলার কী ভাবে অনূর্ধ্ব -১৮ হয়ে গেল? তড়িৎ ঘোষের কন্যা নিজে বলার পরেও কিকরে রেইনবো কর্মকর্তা অভিযোগ তুলছেন যে মহিলাদের গায়ে হাত উঠেছে?

এখন এই মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে মোহনবাগান ক্লাব কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেন সেটাই দেখার।

এই প্রসঙ্গে বলা যায় গত মরসুমেই প্রথম বার নিজেদের মাঠে আই লিগ আয়োজন করে মোহনবাগান। ইন্ডিয়ান অ্যারোজের সাথে ম্যাচটি ড্র হলেও চেন্নাই ম্যাচটিতে হেরে যায় মোহনবাগান।বিশৃঙ্খলার ভয়ে যখন সংগঠকদের কপালে ভাঁজ সবাই কে অবাক করে দিয়ে পুরো মোহনবাগান গ্যালারি দাঁড়িয়ে ঐ দুই দলের ফুটবলারদের অভিবাদন জানায়। একই ঘটনা ঘটে যুবভারতী তে মিনার্ভা ম্যাচেও। ম্যাচ জেতার পর কটু কথার বদলে পাঞ্জাবের দলটি পায় বীরের সম্মান।

মিনার্ভার কর্ণধার রঞ্জিত বাজাজ, অ্যারোজ দলের কোচ মাতাউ, চেন্নাই দলের ম্যানেজার, এ আই এফ এফ-এর পরিদর্শক সকলের কথাতেই পরবর্তী কালে এই ঘটনার বিবরণ শোনা গেছে।

সুতরাং পিছিয়ে পরলেই বাগান সমর্থকরা মারমুখী হয়ে পরেন একথা বলা যাবে না। তাহলে কী এমন ঘটল যে কলকাতা লিগের ম্যাচে মাত্র এক গোলে পিছিয়ে পরতেই মেজাজ হারাবেন বাগান সদস্যরা?

এই প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল লেডি মেরিনার্স গ্রুপের সাথে।লেডি মেরিনার্সের সভাপতির কাছে জানতে চাওয়া হয়, একজন মেয়ের উপর যে আক্রমণের অভিযোগ উঠছে তাতে তারা এরপর থেকে মাঠে যেতে ভয় পাবেন কিনা?

এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে তার বক্তব্য-“মোহনবাগানের গ্যালারীর মত নিশ্চয়তা,নিরাপত্তা তারা খুব কম জায়গাতেই অনুভব করেন। এখানে সবাই তাদের নিজেদের দিদি,বোন,মেয়ের মতই সম্মান করে। পাশে কেউ ভুল করে বিড়ি জ্বালালেও তাদের দেখতে পেলেই সরে যায় বা নিভিয়ে দেয়
সুতরাং তারা একটুও চিন্তিত নয়।”
বরং মোহনবাগানের পরবর্তী ম্যাচে তারা প্রত্যেকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে যাবে যাতে লেখা থাকবে ‘I AM A LADY MARINER AND I AM SAFE HERE.’

ঘটনাচক্রে কাকতালীয়ভাবে মঙ্গলবারেই এক মোহনবাগান মহিলা সমর্থক সোহিনী দেব রয় তার ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন “আমি একা একজন মহিলা খেলা দেখতে গেছিলাম। সেখানে আমার আশেপাশের সমর্থকরা আমায় এতোটাই সুরক্ষিত ভাবে বসতে দেন যাতে করে আমার মনে হচ্ছিল আমার চারপাশে সুরক্ষা বলয় রয়েছে। তারা শুধুমাত্র আমার জন্যে পুরো খেলায় কোনোরকম ধুমপান করেননি। এমনকি গোল খাওয়ার পরেও তারা তাদের ভাষা নিয়ে সাবধান ছিলেন যাতে আমি কোনোভাবে অস্বস্তি অনুভব না করি।”

কোথাকার জল এখন কোথায় গড়ায় সেটাই দেখার। এটুকু বলাই যায় রেইনবো ম্যাচ জেতার পর ফুটবল মরশুমের শুরুতেই মোহনবাগান সমর্থকদের অবস্থা এখন রামধনুর মতোই বিভিন্ন বর্ণে ছেয়ে গেছে।